চাটমোহরের রোজিনা রাজশাহী বিভাগে শ্রেষ্ঠ জয়িতা

0 ৫৫০

আফতাব হোসেন: পাবনার চাটমোহরের রোজিনা রাজশাহী বিভাগে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের চকউথুলী গ্রামের মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে মোছাঃ রোজিনা খাতুন (৩০)। রাজশাহী বিভাগীয় ‘জয়িতা অন্বেষণ বাংলাদেশ-২০১৯’ এ শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে তিনি পুরস্কার পেলেন। এর আগে তিনি উপজেলা ও জেলা পর্যায়েও শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছিলেন।৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর বিভাগীয় পর্যায়ের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

 

এতে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে বিশেষ সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে পাঁচজন নারীকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ‘নির্যাতনের বিভিষীকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী’ ক্যাটাগরীতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে রোজিনা খাতুন বিভাগীয় পুরস্কারে ভূষিত হন।

অনুষ্ঠানে নির্বাচিত প্রত্যেক জয়িতাকে নগদ অর্থসহ ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। করোনার কারণে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার।রাজশাহীতে বিভাগীয় কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহীর সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা, জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, সমাজসেবী শাহীন আক্তার রেনী, নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাজিদ হোসেন,অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জাকীর হোসেন, অতিরিক্ত ডিআইজি (রাজশাহী) টি এম মোজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

রোজিনা যেভাবে শ্রেষ্ঠ জয়িতা : হতদরিদ্র ভ্যানচালক রবিউল ইসলামের দুই মেয়ের মধ্যে বড় রোজিনা খাতুন। টাকার অভাবে পড়াশোনা হয়নি তার। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ২০০৫ সালে আব্দুল আলিমের সাথে বিয়ে হয় রোজিনার। কিন্তু আব্দুল আলিমের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকায় সুখ তার কপালে জোটেনি। মাদকাসক্ত স্বামীর সংসারে অত্যাচার নির্যাতন চলতেই থাকে। এর মাঝেই লুকিয়ে পড়াশোনা করে ২০০৮ সালে এসএসসি ও ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি। পরে অত্যাচার নির্যাতনের পরিমাণ বাড়তে থাকলে বাধ্য হয়ে ২০১৩ সালে স্বামীর ঘর ছেড়ে বাবার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। তখন তিনি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

 

বাবার সংসারে অভাব-অনটনে সেখানেও ঠাঁই হয় না তার। ১৫ দিন পর বাবার বাড়ি থেকে চলে যান ঢাকায়। সেখানে চাকরি করেন একটি বেসরকারি ওষুধ কম্পানিতে। এর মাঝেই জন্ম নেয় কন্যা সন্তান। ২০১৪ সালে বাবার অসুস্থ্যতার খবরে সাত দিন বয়সী শিশুকে নিয়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। তার ফিরে আসার খবর পেয়ে রোজিনাকে ফিরিয়ে নিতে তার বাবার বাড়িতে আসেন স্বামী আলিম। ভুল স্বীকার করে ভরণপোষণের নিশ্চয়তা দেওয়ায় আবার স্বামীর ঘরে ফিরে যান রোজিনা। মেয়ের বয়স যখন ৩৭ দিন তখন স্ট্রোক করে মারা যান রোজিনার স্বামী আলিম।

 

আর তার একমাস পরই মারা যান রোজিনার বাবা রবিউল ইসলাম। কোলে নবজাতক সন্তান, ঘরে মা আর বিবাহযোগ্যা বোন। দ’ুচোখে অন্ধকার দেখেন রোজিনা। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। হাতে থাকা সামান্য কিছু টাকা দিয়ে বাড়িতে দোকান করে শুরু করেন দর্জির কাজ। পাশাপাশি মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কম্পানিতে চাকরি শুরু করেন।

এর মাঝেই আবারো শুরু করেন পড়াশোনা। ২০১৫ সালে ডিগ্রি পাস করেন। তারপর কৃষি অফিসে ফার্মার ফ্যাসিলিটর (এফএফ) পদে খন্ডকালীন চাকরি ও মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্সে ডিস্ট্রিক্ট কো-অর্ডিনেটর পদে চাকরি করছেন। ছোট বোনকে দুই লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়েছেন। জমি কিনে বাড়ি করেছেন। সবমিলিয়ে জীবনের সব দুঃখ কষ্ট মাড়িয়ে স্বাবলম্বী নারীর নাম রোজিনা।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.