টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতে নবীন কর্মকর্তাদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

২২৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলাটাই সরকারের লক্ষ্য। এজন্য নবীন বিসিএস কর্মকর্তাদের দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করতে হবে। আমি চাই তরুণ অফিসাররা তাদের মনন ও বুদ্ধিমত্তাকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। তারা দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতেও বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৩তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, (বিপিএটিসি) সাভার আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনসহ আরও ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে উন্নত ও সুন্দর জীবন দেওয়ার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এই বাংলাদেশ ব-দ্বীপ অঞ্চলের একেক জায়গার সমস্যা একেক রকম। সেগুলো নিরূপণ করে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নয়নটা সবসময় যাতে টেকসই হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তাঁর সরকার দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দরিদ্র থাক, সেটা আমি চাই না।

ইতোমধ্যে হতদরিদ্র ভূমিহীন গৃহহীনদের মাঝে বিনামূল্যে ঘর-বাড়ি করে দেওয়া তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবের এই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তাঁর মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে, সেটাই আমি চাই। দেশে কোনো ভূমিহীন বা গৃহহীন যেন না থাকে।

প্রধানমন্ত্রী কোনো এলাকায় গৃহহীণ বা ভূমিহীন ব্যক্তি সরকারের গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে কি না, তা খুঁজে দেখার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তাঁর আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে শুধু গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছি তাই নয়, তাদের জীবন-জীবিকারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কাজেই আমি চাই আপনারা যারা নতুন হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন, তারাও এই বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখবেন। দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব, সেভাবেই আপনারা কাজ করে যাবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, সুন্দর জীবনের অধিকারী হোক এবং সে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কোর্সে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনকারী তিন কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে পদক ও সনদ তুলে দেন। শেখ রায়হান আকবর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে রেক্টরস পদক গ্রহণ করেন। জোবায়দা ফেরদৌস দ্বিতীয় এবং আব্দুল্লাহ আল রাজী তৃতীয় হন। ৬ মাসব্যাপী এবারের কোর্সে মোট ৪৬১ জন অংশগ্রহণ করেন। যার মধ্যে ১১৯ জন ছিলেন নারী।

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম ছাড়াও বিপিএটিসির রেক্টর রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস স্বাগত বক্তব্য দেন। সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ হাসান ও ফারজানা ইয়াসমিন অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। ৭৩তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিওচিত্রও পরিবেশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জনগণের সেবায় নিবেদিত এবং দক্ষ ও পেশাদারি মনোভাব সম্পন্ন জনপ্রশাসন গড়ে তোলাটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

জনগণ যেন সবকিছুতে সম্পৃক্ত থাকে, সেজন্য মন্ত্রণালয়ের নামটিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় করে দিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবা দেওয়াটা আমাদের সকলের সাংবিধানিক কর্তব্য। এটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। কাজেই জাতির পিতার সেই আদর্শ ধারণ করেই আপনারা কাজ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সম্পাদিত জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার (স্পেশাল ব্রাঞ্চের) রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত বই ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এর সিরিজ বইগুলো এবং জাতির পিতার লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন গ্রন্থটিও প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের পড়ে দেখার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, এই সিরিজগুলোতে যদি একটি চোখ বোলানো যায়- তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসকে জানা যাবে, সংগ্রাম সম্পর্কে জানা যাবে, সর্বপরি সমগ্র বাংলাদেশ সম্পর্কে জানা যাবে। অন্যদিকে ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থ থেকে সেখানকার নারীর ক্ষমতায়ন বা নারীদের অবস্থা বা সমাজের অনগ্রসর লোকদের অবস্থা, কৃষক-শ্রমিকের অবস্থা সম্পর্কে জাতির পিতার অনুধাবন ও মূল্যায়ন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ সম্ভব হবে।

বিশ্বের সাথে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে ঘিরে আইসিটি নির্ভরতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং আমাদেরকে সে ধরনের দক্ষ জনবলও গড়ে তুলতে হবে।

তিনি এক্ষেত্রে কোর্সে নিজের গ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করায় কোর্স সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আমরা যদি নিজের গ্রামকেই ভালোভাবে না চিনি, তাহলে মাটি ও মানুষের প্রকৃত সেবাটা সম্ভব হবে না।

প্রধানমন্ত্রী আমাদের রপ্তানি পণ্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি যে অঞ্চলে যে পণ্য উৎপাদন হয় সেখানকার নির্দিষ্ট বিশেষ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে সে ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

Comments are closed.