শাহজাহান শাজু, নিয়ামতপুর প্রতিনিধি: যে কোন উৎসবই বাংলা তথা বাঙালির একটা বিশেষ ঐতিহ্য বহন করে পিঠা পুলি। যদিও উৎসবের রং চেহারা পূর্ব থেকে অনেকটাই আলাদা হয়ে গেছে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আজো প্রাচীন ধারাকে ধরে রেখেছে বাঙালি। তালের পিঠা দিযে অতিথি আপ্যায়নের রেওয়াজ বরেন্দ্র অঞ্চলের আজকের নয় বহু যুগ থেকেই চলে আসছে।
শ্রাবন মাসের শেষ আর ভাদ্রে তাল পাকতে শুরু করে। প্রবাদই আছে ভাদ্রের গরম মানেই তাল পাকা গরম! সেই তালেই কত কি না কি তৈরী করা যায়! তালের বড়া বাঙালির রসনায় এক লোভনীয় খাবার। সেইসঙ্গে তালের ক্ষীর হলে তো আর কথাই নেই বাংলা ও বাঙালির। তৈরী হয় আরো নানান রসালো স্বাদের পদ। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম এই তাল গাছ থেকে অনেকটাই দূরে। বাংলার ঐতিহ্যে জড়িয়ে আছে এই তাল। আর তাই প্রতিবারেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজন করা হয় তাল পিঠা উৎসব।
এ রকম একটি আয়োজন হয় বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র নওগাঁতে।
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙ্গা তালতলিতে (তালসড়ক) গত বছর থেকে আয়োজন হয়ে আসছে তাল পিঠা উৎসব। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর এই তাল সড়কে বসবে ঐতিহ্যবাহী তাল পিঠা উৎসব। রকমারি তালের বড়া, তালের মালপোয়া, তাল খির সহ আরো অনেক রকমারি খাবারের পসরা বসবে এখানে।
এ বছর মেলার পরিধি বাড়ছে। মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী মহাদয় বাবু সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজেই এ মহা আয়োজনের রূপকার । ভ্রমন পিপাসু ও মেলার দর্শনার্থীদের জন্য নতুন করে স্থপন করেছে সুপেয় পানির ব্যাবস্থা। মেলা ও দর্শনার্থীদের জরুরী প্রয়োজনে ওজুখানা সহ টয়লেট। এছাড়াও সুন্দর্য্য বর্ধনে সারি সারি তালগাছেগুলির পাশেই পুকুর খনন করে পাড় বাধানোসহ পুকুরে পদ্ম ফুল এবং পুকুর পাড়ে বাহারি ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। সেই সাথে মেলায় এবং তালতলী দর্শনে আশা দর্শনার্থীদের পর্যাপ্ত বসার জায়গা রয়েছে। তালপিঠা মেলা উপলক্ষে সুসজ্জিত ৩শটি স্টল থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
তালতলী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বদিউজ্জামান বাবু প্রতিবেদককে জানান, গতবছর এখানে ২৪সেপ্টম্বরে তালপিঠা মেলা হয়েছিলো। এই তালগাছ লাগিয়েছেন বর্তমান খাদ্য মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। তিনি যখন এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর উদ্যােগেই এই মেলার আয়োজন। এতে এলারবাসী ব্যাপক খুশি। মেলা এবং তালতলী স্থানীয় একমাত্র পর্যটন এলাকা হওয়ায় মেলাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে কিছু মানুষের আয়ের উৎস।
মেলার কাজ দেখতে আশা পর্যটক আইরিন পারভিন সুইটি বলেন, আমারা নওগাঁতে থাকি। আমাদের বাড়ি নিয়ামতপুরের ভাবিচা ইউনিয়নে। আমারা বাড়ি আসলেই পরিবার বাচ্চাসহ এখানে বেড়াতে আসি। তালগাছের সারি দেখে আর নির্মল বাতাস মনটা ছুয়ে যায়।
অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী বজলুর রশিদ বলেন, তালতলী এখন পর্যটন এলাকায় পরিনত হয়েছে। সেদিকে বিবেচনা করে খাদ্য মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি স্যার এর পরামর্শ ক্রমে দর্শনার্থীদের যাতে কোন সমস্যা না হয় এর জন্য ব্যাপক উন্নয়নের কাজ চলছে। আগামী ২৪সেপ্টম্বর এখানে তালপিঠা মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এলাকায় এখন আনন্দের জোয়ার বইছে। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসে। তারা ছবি উঠায় ঘোড়ার চড়ে তালতলীর এপাশ ওপাশ ঘুরে আনন্দ উপভোগ করে।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ এবারের তাল পিঠা মেলার মূল আকর্ষণ হবে।
Comments are closed.