ত্রিমাত্রিক ছাপাখানায় জিনিস তৈরি

0 ২,৩৭০

প্রথম ছাপাখানা চালু হয়েছিল ১৫ শতকের মাঝামাঝি। এর আগে হাতে লেখা ছাড়া কোনো উপায়ই ছিল না। প্রযুক্তির কল্যাণে মুদ্রণ পদ্ধতি এখন এতটাই উন্নত হয়েছে যে, যেকোনো আকৃতির বস্তুও ছাপা যায়। বলা হচ্ছে থ্রিডি প্রিন্টারের কথা।
থ্রিডি প্রিন্টিং বা ত্রিমাত্রিক মুদ্রণের জন্য যে বস্তুটি ছাপতে, ভালো করে বললে বানাতে চান, তার একটি কম্পিউটারে ত্রিমাত্রিক নকশা করতে হবে এবং প্রিন্টারে বস্তুটির মূল উপকরণগুলো দিয়ে দিতে হবে। বাকি কাজ থ্রিডি প্রিন্টারের। সাধারণত সব থ্রিডি প্রিন্টার একই পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজিস: র্যা পিড প্রটোটাইপিং টু ডাইরেক্ট ডিজিটাল ম্যানুফ্যাকচারিং বইয়ে থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের আটটি ধাপের কথা বলা হয়েছে। এই ধাপগুলো অনুসরণ করে ত্রিমাত্রিক যেকোনো বস্তু, এমনকি বাড়ি পর্যন্ত বানানো যায়।

ধাপ ১
ক্যাড
প্রথমেই কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন বা ক্যাড সফটওয়্যার ব্যবহার করে একটি ত্রিমাত্রিক নকশা দাঁড় করাতে হয়। যে ধরনের নকশা তৈরি করতে চান তা পরিপূর্ণ করতে সফটওয়্যারটি থেকে বেশ কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাবে।

ধাপ ২
এসটিএলে রূপান্তর
ক্যাডের নকশাকে এসটিএল ফরম্যাটে রূপান্তর করতে হবে। এসটিএলের পূর্ণ রূপ স্ট্যান্ডার্ড ট্যাসিলেশন ল্যাঙ্গুয়েজ-ফাইলের এই ধরন (ফরম্যাট) ১৯৮৭ সালে থ্রিডি ব্যবস্থার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ত্রিমাত্রিক ছাপার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসটিএল ফাইল ব্যবহার করা হয়।

ধাপ ৩
এএম যন্ত্র স্থানান্তর এবং এসটিএল ফাইলের ব্যবহার
যে কম্পিউটার থ্রিডি প্রিন্টার নিয়ন্ত্রণ করবে তাতে এসটিএল ফাইলটি কপি করে রাখতে হবে। তারপর বস্তুটির আকার-আকৃতি ঠিক করতে হবে। বিষয়টা দ্বিমাত্রিক (টুডি) প্রিন্ট পদ্ধতির মতোই। যেখানে কিছু প্রিন্ট করার জন্য সমতল ও উল্লম্ব বরাবর পরিমাপ নির্ণয় করতে হয়।

ধাপ ৪
প্রিন্টিং মেশিন প্রস্তুত করা
একটি প্রিন্টিংয়ের জন্য প্রতিটা যন্ত্রের আলাদা কিছু প্রস্তুতি পর্ব রয়েছে। প্রিন্টের জন্য পলিমার, বাইন্ডার বা অন্যান্য মৌলিক উপাদান দিয়ে যন্ত্রটি পূর্ণ করতে হয়।

ধাপ ৫
বস্তু নির্মাণ
এখন প্রিন্টিং মেশিন তার নিজ কাজ করতে থাকবে। এই ধাপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বয়ংক্রিয়। প্রিন্টিংয়ের প্রতিটা পরত সাধারণত ০.১ মিলিমিটার পুরু, যা ক্ষেত্রবিশেষে পরিবর্তিত হতে পারে। যে বস্তু প্রিন্ট করা হচ্ছে তার আকার, ব্যবহৃত উপাদান এবং প্রিন্টিং যন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে এই কাজ শেষ হতে বেশ কয়েক ঘণ্টা-এমনকি পুরো দিনও লেগে যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পরপর অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে যন্ত্রে কোনো ত্রুটি আছে কি না।

ধাপ ৬
অপসারণ
প্রিন্ট সম্পূর্ণ হলে সাবধানে বস্তুটি প্রিন্টার থেকে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নিরাপত্তা উপকরণ ব্যবহার করতে হবে, যাতে বস্তুটির উত্তপ্ত উপরিতল বা রাসায়নিক উপাদান শরীরের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।

ধাপ ৭
পরবর্তী প্রক্রিয়া
বেশ কিছু থ্রিডি প্রিন্টারের ক্ষেত্রে প্রিন্ট শেষ হওয়ার পরও কিছু কাজ রয়ে যায়। তৈরি হওয়া মুদ্রিত বস্তুর গায়ে লেগে থাকা পাউডার ঝেড়ে ফেলতে হয়। প্রয়োজনে ধুয়ে ফেলতে হয়। এই কাজ করার সময়ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ বস্তুটি দৃঢ় হতে বেশ কিছুটা সময়ও লাগতে পারে।

ধাপ ৮
প্রয়োগ
মুদ্রিত বস্তুটি এখন প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত।
মারিফুল হাসান, সূত্র: হাউ স্টাফ ওয়ার্কস
থ্রিডি প্রিন্টিং প্রক্রিয়া অনেকটা এমন
মডেল হিসেবে বস্তু নেওয়া যেতে পারে
বস্তুর ত্রিমাত্রিক রূপ দিতে হবে ক্যাড সফটওয়্যারে
এরপর সফটওয়্যার সেই বস্তুটি নিচ থেকে ওপরের দিকে কয়েক ভাগে ভাগ করে নেয়।
ধাতব বস্তুর ক্ষেত্রে প্রিন্টারটি প্রথমে পরতের পর পরত সেই ধাতুর গুঁড়া দিয়ে থাকে। এরপর লেজার রশ্মির সাহায্যে গুঁড়া গলিয়ে কঠিন রূপ দেওয়া হয়।
প্রিন্ট শেষ হলে প্রয়োজন অনুযায়ী মসৃণ করার চেষ্টা করা হয়।
এরপর চাইলে নির্মিত বস্তুর ওপরে নকশা করা যেতে পারে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.