ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে বিএসটিআই’র পরিদর্শকের বিয়ে

0 ৩৯০

পুঠিয়া প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে কলেজ ছাত্রীকে বিয়ে করেছিলেন বিএসটিআই’র পরিদর্শক মিঠুন কবিরাজ। এর আগে তিনি নাটোর টিএমএসএস টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এর ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ইনচার্জ ছিলেন। মিঠুন কবিরাজ রাজশাহীর পবা থানাধীন নওহাটা বড় মসজিদ সংলগ্ন এলাকার শ্রী রতন কবিরাজের ছেলে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার বাড়ইপাড়া (মন্ডলপাড়া) গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের মেয়ে সবনম আক্তার সাথী অভিযোগ করে বলেন, ২০১৩ সালে এসএসসি পাশ করার পর নাটোর টিএমএসএস টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে কম্পিউটার বিভাগে ভর্ত্তি হই। আমাদের বিভাগে ক্লাশ নিতেন মিঠুন কবিরাজ স্যার। সেই থেকে নিজের ধর্মীয় (সনাতন-হিন্দু) পরিচয় গোপন রেখে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন এবং বিয়ে করবেন বলে প্রলোভন দেখান। এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্র্ক গড়ে উঠে। যখন বুঝতে পারি, তিনি হিন্দু ধর্মালম্বী তখন তার সাথে সম্পর্ক না রাখার সিদ্ধান্ত নিই। পরে মিঠুন ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন।
তার তিনদিন পর ২০১৪ সালে ৬ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে রাজশাহী নগরীর হেতেম খাঁ এলাকায় মিঠুনের বন্ধুর বাসায় ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক আমরা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু কথিত একজন মাওলানার মাধ্যমে ওই বিয়ে যে ভুয়া ছিল তখন তা বুঝতে পারিনি। পরে মিঠুনের বিএসটিআইয়ে পরিদর্শক পদে চাকুরি হয়। এরপর পোস্টিং নিয়ে রংপুরে চলে যান। আর আমাকে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় রেখে দেন। সেখানে প্রতি সপ্তাহে যাওয়া আসা করতেন মিঠুন। ইতোমধ্যে আমাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ১১ মাস বয়সে শিশুটি মারা যায়। তার তিন মাস পর থেকে মিঠুন কবিরাজ আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
ভুক্তভোগী আরো জানান, পরবর্তীতে স্বামীর সন্ধানে আমি শশুর বাড়ি নওহাটা যাই। সেখানে মিঠুনের দুলাভাই রনজিৎ ও মিলন আমাকে বলেন, মিঠুন একটি হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করেছে। তাই আমি যেনো তাকে ভুলে যাই এবং আমাকে অন্যত্র বিয়ে করে নেয়ার কথা বলেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পর আমার উপর চলে মিঠুনের নজরদারি। কিছুদিন পূর্বে তিনটি মোটরসাইকেল করে মুখে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় ৬ জন যুবক আমার বাড়িতে গিয়ে গলায় ধারালো ছুরি ধরে হুমকি প্রদান করেন। যাতে করে আমি আর কখনো মিঠুনের বিরুদ্ধে থানায় বা সাংবাদিকদের কাছে কোনো অভিযোগ না দিই। আর তাদের অবাধ্য হলে আমার বাবা সহ আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দেন।
এখানেই শেষ নয়, পুঠিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্চু ও পুঠিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার চেম্বারে ডেকে গালিগালাজ সহ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলেন। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপর্ত্তাহীনতায় ভুগছি। আর আমি নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঘর ছেড়ে আতœগোপনে রয়েছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মিঠুন কবিরাজ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। ধর্মীয় পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া বিয়ে করার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, যা পারেন লিখেন। আপনার কাছে কী প্রমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম হীরা বাচ্চু বলেন, আামি তো প্রশাসনের কেউ না। আমি কীভাবে পদক্ষেপ নেবো। এক পর্যায়ে তিনি জানতে চান-আপনার কাছে কী প্রমাণ রয়েছে। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয়।
এদিকে, মিঠুন কবিরাজের এই প্রতারণার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন পুঠিয়ার বাড়ইপাড়া ও পবার নওহাটা এলাকার লোকজন। একই সঙ্গে মিঠুনের প্রতারণার অভিযোগ অনেক পুরনো বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপÍ কর্মকর্তা (ওসি) ইনচার্জ মোঃ রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। এখনই যেহেতু বিষয়টি শুনলাম, খোঁজ নিয়ে দেখছি ও ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাচ্ছি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.