পাবনায় পাকা জামে রঙিন হাটবাজার দিনে বিক্রি ২৫ লাখ টাকার

১৫৫
মাসুদ রানা, আটঘরিয়া: মধুমাস জ্যৈষ্ঠের সুমিষ্ট রসালো ফল জাম উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদী প্রসিদ্ধ। পাকা জামে রঙিন হয়ে উঠেছে উপজেলার মুলাডুলি জামের পাইকারি হাট।  শত শত ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় এখন মুখর এ হাট। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার জাম বেচাকেনা হয় হাটে। স্বাদে ও গুণে সুখ্যাতির জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা মুলাডুলি আড়তে জাম কিনতে আসেন।
ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি, ফরিদপুর, চাঁদপুর, দাশুড়িয়া, বাঘহাছলা, গোয়ালবাথান, আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া, খিদিরপুর, পারখিদিরপুর, লালপুরের পালিদেহা, পুরাতন ঈশ্বরদী, কচুয়া, রাকসা, দুয়ারিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের বাড়ির আঙিনা ও সড়কের পাশে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ জামের গাছ।
 এসব গাছের জাম পাকার পর মালিকরা বাজারে নিয়ে আসেন। জাম স্বল্পকালীন ফল হওয়ায় বাজার স্থায়ী হয় সর্বোচ্চ এক মাস।
স্থানীয়ভাবে পরিচিত হাঁড়ি জাম, ঠাকি জাম ও ক্ষুদে জাম এখানে পাওয়া যাচ্ছে। আকারভেদে বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে জাম।
 প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ট্রাক জাম সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। জাম বিক্রি করে এ অঞ্চলের কৃষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে।
 হাটবারের দিন দুপুরে মূলাডুলিতে গিয়ে দেখা যায়, প্লাস্টিকের ঝুড়িতে স্তূপে স্তূপে জাম সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কুচকুচে কালো জামে সূর্যের আলো পড়ে চকচক করছে। যা দেখে যেকোনো মানুষের মন ভরে যাবে।
 দূরদূরান্ত থেকে অটোবাইক, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও সাইকেলে করে গাছ মালিক ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা এ আড়তে জাম নিয়ে আসছেন। পাইকাররা এসব জামের দামদর করে কিনে নিচ্ছেন।
আড়তে জাম বিক্রি করতে আসা মুলাডুলি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, এক সময় মানুষ ভালো কাঠের জন্য বাড়ির আশপাশে জাম গাছ লাগাতো। এখন কেবল কাঠের জন্যই নয়, অনেকেই জাম বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছে।
তাই এলাকায় জামের গাছ বেড়েছে। আমার বাড়ির চারটি গাছে জাম ধরেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকার জাম বিক্রি করেছি। আরো বিক্রি করা যাবে।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহের শুরুতেই জাম বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা কেজি, এখন বাজারদর ৬০ টাকা। অন্যবারের তুলনায় এবার জামের দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
মাজপাড়া গ্রামের জাম বিক্রেতা আরশেদ আলী বলেন, জাম নিজেরা কিছু খেতাম আর বেশির ভাগই মানুষ খেত ও নষ্ট করতো। এখন জাম বিক্রি করে ভালো টাকা পাওয়া যায়। আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ বাড়ির আঙিনায় এখন জাম গাছ আছে।
মুলাডুলি পাইকারি হাটের ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম স্বপন বলেন, এখানকার জাম অত্যন্ত সুস্বাদু ও আকারে বড়। তাই রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে এ জামের চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিনই জাম দেশের বিভিন্ন ফলের দোকানে পাঠাচ্ছি। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছে, আমরাও লাভবান হচ্ছি।
মূলাডুলি জাম আড়তের স্বত্বাধিকারী আমিনুর রহমান বাবু জানান, ঈশ্বরদীসহ প্রায় ৭-৮টি উপজেলার মানুষ মুলাডুলি আড়তে জাম বিক্রি করতে আসেন।
বাণিজ্যিকভাবে এখানে জামের চাষ না হলেও বাড়ির আঙিনায় লাগানো গাছ থেকে এসব জাম তারা সংগ্রহ করেন। ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা জাম কিনে বাজারজাত করে থাকেন।
তিনি আরো জানান, প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার জাম এখানে বেচাকেনা হয়। প্রতিবছরই জামের এ আড়তে আমদানি বাড়ছে।
মুলাডুলি কাঁচামাল ও ফল আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, ঈশ্বরদীর লিচুর মতো এখানকার জামের সুখ্যাতিও দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে।
জাম বিক্রি করে এ অঞ্চলের মানুষ ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। একসময় ঈশ্বরদীতে বাণিজ্যিকভাবে জাম চাষও শুরু হবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে বাণিজ্যিকভাবে জাম চাষ এখনো শুরু হয়নি। মুলাডুলি আড়তে যে পরিমাণ জাম বেচাকেনা হয় তাতে কৃষকরা একসময় বাণিজ্যিকভাবে জাম বাগান করতে উৎসাহিত হবেন।
জাম ঈশ্বরদীর একটি সম্ভাবনাময় ফল হয়ে উঠবে। এ বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবো।

Comments are closed.