প্রতিদিন এক মুঠোবাদাম মানেই সুস্বাস্থ্য

0 ৬০৮

স্বাস্থ্য ডেস্ক: আমরা সবাই কম বেশি বাদাম খেতে পছন্দ করি।বন্ধুদের সাথে আড্ডায় কিংবা দূরে কোথাও ভ্রমনে,বাদাম যেন সবার পছন্দের সঙ্গী।এই খাবারটি, দামি কোন খাবার না হলেও পুষ্টিগুণের বিচারে অনেক দামি খাবারের সঙ্গে সমান ভাবে পাল্লা দিতে পারে।
আমরা মূলত চীনা বাদামের সাথে বেশি পরিচিত। তবে,বাজারে অনেক ধরণের বাদাম পাওয়া যায়।আর এই প্রতিটি বাদাম,বিভিন্ন পুষ্টি গুনে গুণান্বিত এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
আমরা যত ধরণের স্নাক্স খেয়ে থাকি,তার মধ্যে বাদাম হল উৎকৃষ্ট খাবার।সারাদিনে আমরা,বড় মিলের পাশাপাশি যে কয়টি ছোট মিল গ্রহণ করি, সেখানে অন্তত একটি মিলে যদি আমরা এক মুঠো বা ৩০ গ্রাম মিক্স বাদাম গ্রহণ করি তবে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
বাদাম শুধু,স্নাক্স হিসাবে নয়,বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতেও অতুলনীয়।

বাদামের পুষ্টিমূল্য

বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার।কারণ বাদামে রয়েছে-অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন,পলি ফেনল,ফাইবার, সেলেনিয়াম,ভিটামিন-ই,বায়োটিন,পলি এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড,ফোলেট,নিয়াসিন,কপার,ম্যাংগানিজ সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। বাদামে  আরও রয়েছে বায়োএক্টিভ প্লান্ট কম্পাউন্ড এবং ২০ টি অ্যামিনো এসিড।
প্রতি সারভিং(২৮ গ্রাম), পেস্তা বাদামে ক্যালরি রয়েছে ১৫৬,কাঠবাদামে রয়েছে ১৫৬, চীনা বাদামে রয়েছে ১৭৬ ক্যালরি,ব্রাজিল নাটে রয়েছে ১৮২ ক্যালরি এবং কাজু বাদামে রয়েছে ১৫৫ ক্যালরি।

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা


বাদাম ইমিউন সিস্টেমকে স্টিমুলেট করে

বাদামে সবচেয়ে বেশি পরিমানে রয়েছে আর্জিনিন নামক অ্যামিনো এসিড।যা,আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে স্টিমুলেট করে।সুতরাং,যারা প্রায়ই অসুখে ভোগেন তারা নিয়ম করে এক মুঠো মিক্স বাদাম খেতে পারেন।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

যারা,ওজন কমাতে ইচ্ছুক তারা নিয়মিত বাদাম খাবেন।অল্প পরিমাণে বাদাম খেলেও ক্ষুধার পরিমাণ কমে যায়।বাদামে থাকা ফাইবার,স্টমাক ফুলনেস ফিলিং দেয়।ফলে, স্নাক্স হিসাবে বাদাম খেলে,বড় মিল গুলোতে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা থাকেনা। তবে,প্রতিদিন বাদাম খাওয়ার পরিমাণটা ৩০ গ্রাম হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা,বাদামে উচ্চ পরিমাণে ফ্যাটও রয়েছে,সুতরাং বেশি বাদাম খেলে ওজন বাড়ার ও সম্ভাবনা রয়েছে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে 

বাদামে থাকা আইসোফ্লাভোন্স, রেজভারেট্রল এবং ফেনোলিক এসিড বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার যেমন: কলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং পোস্ট – মেনোপোজাল ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

পিত্তথলির পাথর হবার ঝুঁকি কমায়

নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের বাদাম খেলে পিত্তথলির রোগ এবং পাথর হবার ঝুঁকি অনেক কম থাকে। পুরুষেরা,সপ্তাহে অন্তত ৫ সারভিং চিনাবাদাম সহ অন্য বাদাম খেলে তাদের পিত্তথলির বিভিন্ন রোগ হবার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।পাশাপাশি,নারীরা যদি সপ্তাহে অন্তত ৫ সারভিং বাদাম খান তবে তাদের পিত্তথলির অসুখের কারণে তা অপসারণ করার প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যায়।আর প্রতি সারভিং বাদাম মানে ২৮ গ্রাম।

থাইরয়েড ফাংশনকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে

বাদামে সেলেনিয়াম নামক মিনারেল থাকে। আর এই মিনারেল টি থাইরয়েড ফাংশন ঠিক রাখার জন্য জরুরী।বিশেষ করে মাত্র দুটি ব্রাজিল নাটে যে পরিমাণ সেলেনিয়াম থাকে,তা একজন মানুষের প্রতিদিনের সেলেনিয়ামের,চাহিদা ১০০% পূরণ করতে পারে। সুতরাং,যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে,তারা প্রতিদিন অন্য বাদামের সাথে দুটো ব্রাজিল বাদাম রাখুন।

বাদাম ব্রেনের জন্য ভাল

বাদামে থাকা ভিটামিন-ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষ ঝিল্লীকে সুরক্ষা প্রদান করে।এছাড়া,বাদামে থাকা থায়ামিন মস্তিষ্ক এবং নার্ভাস সিস্টেমকে,গ্লুকোজ থেকে এনার্জি রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।ফলে,আমাদের মস্তিষ্ক সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে।
– এছাড়া,গর্ভকালীন সময়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গর্ভবতী মা,যদি প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০-৪০ গ্রাম,বিভিন্ন ধরণের বাদাম গ্রহণ করেন,তবে তা গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে সাহয্য করে।
– পাশাপাশি,বাড়ন্ত শিশুদের বিকাশের জন্য নিয়মিত দুধের সাথে বাদাম মিক্স করে খাওয়াতে পারেন অথবা বাদাম থেকে তৈরি মিল্ক খাওয়াতে পারেন।
যাদের, মেমরি দুর্বল তারা নিয়মিত বাদাম খান,অবস্থার উন্নতি হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে



যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা নিয়মিত বাদাম খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।বাদামের জি আই ১৪।তাই,সকালের স্নাক্স বা লেইট নাইট স্নাক্স হিসাবে ডায়াবেটিস রোগিরা বাদাম খেতে পারেন এতে করে সুগার লেভেল বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

এইচ ডি এল বাড়াতে সাহায্য করে

বাদাম ব্যাড কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমাতে সাহায্য করে এবং বাদামে থাকা হেলদি ফ্যাট এইচডিএল বা হেলদি ফ্যাট বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে, নিয়মিত বাদাম খেলে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

এজিং প্রতিরোধ করে

কেউ চাইনা তার বয়স বাড়ুক।বাদামে,শক্তিশালী অ্যান্টিএজিং অনু, রেজভারেট্রল রয়েছে। যা দ্রুত বয়স বাড়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে। ফলে,নিয়মিত বাদাম খেলে তরুণ থাকবেন বহুদিন।

পিসিওএস এবং পুরুষের ইনফার্টিলিটি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে


বাদামে থাকা মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড পিসিওএসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।পাশাপাশি,যেসব পুরুষ ইনফার্টিলিটির সমস্যাতে ভুগছেন,চিকিৎসার পাশাপাশি হেলদি ডায়েট এবং নিয়মিত খাদ্য তালিকায় বাদাম রাখলে ইনফার্টিলিটির সমস্যা দূর হওয়া সম্ভব।

বাদাম খাওয়ায় সতর্কতা :

অতিরিক্ত বাদাম খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।কারণ,বাদামে উচ্চ পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে।এছাড়া, পেটে গ্যাস হতে পারে।
– যারা,প্রতিদিন ৪টির বেশি ব্রাজিল বাদাম খান তাদের ক্ষেত্রে চুল পড়া,নখ ভেঙ্গে যাওয়া,শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ,মাসেল এবং জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।এর মূল কারণ হল সেলেনিয়াম পয়জনিং।আমাদের,প্রতিদিন যতটুকু সেলেনিয়াম দরকার তা মাত্র ২ টি ব্রাজিল বাদামেই পূরণ হওয়া সম্ভব এবং প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ টি খাওয়া যেতে পারে।
-অনেকের,চিনাবাদামে বাদামে অ্যালার্জি রয়েছে।তাদেরকে অবশ্যয় সব চিনাবাদাম এবং বাদামের তৈরি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
যা, দেহের পুষ্টি উপাদানের শোষণকে বাঁধাগ্রস্ত করে।এমন একটি উপাদান হল ফাইটিক এসিড,যা সব ধরণের বাদামে থাকে।ফাইটিক এসিড জিংক,ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের শোষণকে বাঁধাগ্রস্ত করে।
সুতরাং,বাদামের ক্ষতিকর প্রভাব বাদ দিতে চাইলে অবশ্যয় ভাল মানের বাদাম খেতে হবে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে বাদাম খাওয়া যাবেনা।

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।

Leave A Reply

Your email address will not be published.