প্রথম আসা টিকার অর্ধেকই সত্তোরোর্ধ্বদের জন্য

0 ৩১৩

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ টিকা আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে আসছে। যার অর্ধেকই বয়ঃজ্যেষ্ঠদের দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই টিকা আসার পর ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগেই টিকাদান শুরু হবে।

অক্সফোর্ডের টিকা কোভিশিল্ড আনা ও বিতরণ নিয়ে সোমবার অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শুরুর ৫০ লাখ ডোজ টিকার পুরোটাই ৫০ লাখ মানুষকে প্রয়োগ করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫০ লাখ টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস বা এসএজিই’র নির্দেশনা এবং দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এই অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টিকার প্রয়োগ সংক্রান্ত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত জনগোষ্ঠীকে প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে।

টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক বিতরণ তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এর ৫০ লাখ টিকা পাবেন প্রথম মাসে।

সংখ্যার হিসেবে প্রথম মাসে সবচেয়ে বেশি টিকা বরাদ্দ থাকছে যাদের বয়স ৭৭ বছরের বেশি। ৫০ লাখ টিকার মধ্যে ২৪ লাখ ১৬ হাজার ৬২৬টি টিকা পাচ্ছেন তারা। ৭৭ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীকে দুই ভাগে ভাগ করে টিকা প্রয়োগের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে যাদের বয়স ৮০ বছরের বেশি, এমন ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জন এবং ৭৭ থেকে ৭৯ বছর বয়সী আছেন ১১ লাখ ৩ হাজার ৬৫৩ জন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণে বয়ঃবৃদ্ধরাই সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৭ হাজার ৮০৩ জনের মধ্যে ৪ হাজার ২৮৪ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি।

১৮ বছরের কম বয়সীদের কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হবে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন,“কারণ পৃথিবীর অন্য দেশে কোথাও ১৮ বছরের নিচে কারও উপর ট্রায়াল হয় নাই। কাজেই এটা তাদের ওপর দেওয়া হবে না। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ৩৭ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এছাড়া গর্ভবতী নারীদের উপরও ট্রায়াল হয়নি। এ কারণে প্রায় ৪০ লাখ গর্ভবতী নারী টিকা পাবেন না।”

সরকার শুরু থেকেই বলে আসছে, মহামারি ঠেকাতে সামনে থেকে কাজ করে যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীরা সবার আগে টিকা পাবেন। প্রথম মাসে সবার আগে ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য টিকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সেবায় সরাসরি নিয়োজিত সব ধরনের অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ছয় লাখ স্বাস্থ্যকর্মী প্রথম ধাপেই টিকা পাবেন।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে আনা এই টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে আগেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

টিকা যারা নেবেন, তাদের অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে, যা আগামী ২৬ জানুয়ারি শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম জানিয়েছেন। টিকা নিতে নিবন্ধনের সময়ই একটি কার্ড দেওয়া হবে, যা টিকা নেওয়ার সময় সঙ্গে রাখতে হবে। টিকা নেওয়ার সময় ও স্থান জানিয়ে দেওয়া হবে মোবাইলে এসএমএসে।

টিকা নেওয়ার সময় একটি সম্মতিপত্রে সই করতে হবে; যাতে ঘোষণা দিতে হবে যে এই টিকা গ্রহণের সময় বা পরে কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে কিংবা ক্ষতি হলে তার দায়ভার স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা সরকারের নয়। এই টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, হালকা জ্বর ভাব, যেখানে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে সেখানে ব্যথা এবং মাথা ঝিমঝিম করা, বমি ভাবের কথা জানা গেছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.