ফিলিস্তিন ও গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার এখনই সময়

অনলাইন ডেস্ক: ফিলিস্তিন ও গাজা পৃথিবীর মজলুম জনপদের অন্যতম নাম। ফিলিস্তিনে যায়নবাদী ইহুদিদের সামরিক হামলায় গাজা আজ বিধ্বস্ত। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল এখানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা চলছে। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলায় পক্ষভুক্ত হয়েছে ব্রাজিলও। মামলায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের গাজায় ‘জাতিগত নিধন’ চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিচার আদালতের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রাজিল আইসিজে বিধির ৬৩ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতিসংঘের যেকোনো সদস্য রাষ্ট্র মামলায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যদি মামলাটি এমন কোনো চুক্তির ব্যাখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, যেটির পক্ষ তারা নিজেও। ব্রাজিল এ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে, ইসরাইল ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করছে। ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশন শুরুর আগে থেকেই সারা বিশ্বের জনতা নতুন করে জেগে উঠেছে। ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতির তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। স্বীকৃতি দিয়েছে প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। এর ফলে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫০টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল। গত ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনটি শুরুর আগেই প্রভাবশালী ও শক্তিধর দেশের এসব স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ও বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ।
বিশ্ব মিডিয়ায় প্রতিদিন ফিলিস্তিনের নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের চালানো নির্মমতার চিত্র আসছে। ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী মারণাস্ত্র ব্যবহারের সাথে সাথে নির্লজ্জভাবে ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। গুলি-বোমার আঘাতে নিহত ও ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পারা মানুষের মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহারের প্রমাণের কথাও জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। গণবিধ্বংসী অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সাদা ফসফরাস। ইসরাইল বার বার যুদ্ধবিরতির সাথে প্রতারণা করছে। তারা নিরাপদ এলাকায় আক্রমণ এবং ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি, গাজায় খাদ্য ও ওষুধের পথ বন্ধ করে দেওয়া এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, হাসপাতাল এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের মতো অবকাঠামো ধ্বংস করছে। এমন অবস্থায় মানবিকবোধসম্পন্ন কারো পক্ষেই ইসরাইলকে সমর্থন করার সুযোগ নেই। ধর্ম-বর্ণ, ভৌগোলিক সীমানার বিভেদ ভেঙে প্রতিটি মানুষ ফিলিস্তিন ও গাজাবাসীর পক্ষে দাঁড়ানোকে তাদের মানবিক দায়িত্ব বলে মনে করছে।
আমরা মনে করি, আরব জাহান এবং বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সাধারণ জনগণের এখন আর বসে থাকার সময় নেই। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা সময়ের অপরিহার্য দাবি। এ দাবি পূরণে মুসলিম বিশ্ব ব্যর্থ হলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না। ফিলিস্তিন আর গাজার নারী, শিশু ও অসহায় মানুষের অভিশাপে গোটা পৃথিবী ভারসাম্য হারাবে। যারা আজ নিরাপদে আছেন ভেবে চুপ করে আছেন, তাদের এ শাস্তি দায়ী হবে না। যা কারো কাম্য নয়। তাই যার যার অবস্থান থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার বিকল্প নেই।
তথ্যসূত্র: সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:০৫