বগুড়ায় বন্যা আতঙ্কে নদী পাড়ের হাজারো পরিবার

0 ১৫৬

দীপক সরকার বগুড়া থেকে: বগুড়ায় বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে যমুনা নদীর পানি। রবিবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৩টায় পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে নদী পাড়ের চরাঞ্চলের হাজারো পরিবারের বন্যার আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটছে।

অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলা বেষ্টিত যমুনা নদীর নতুন করে শুরু হয়েছে। ভিটেমাটি ছাড়ছেন এসব এলাকার মানুষ। এর মধ্যে সারিয়াকান্দিতে ১০০ মিটারের মধ্যে হুমকিতে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী(সারিয়াকান্দি পওর উপ-বিভাগ) হুমায়ুন কবির জানান, গত শনিবার বিকেল ৩টায় যমুনার পানির উচ্চতা ছিল ১৬.১৬ মিটার। রবিবার(১৬ জুলাই) বিকেল ৩টায় পানির উচ্চতাও ১৬.১৬ মিটার। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি অপরিবর্তিত রয়েছে। সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানির বিপৎসীমা ১৬.২৫ মিটার। অর্থাৎ পানি বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ উপজেলায় গত কয়েকদিন ধরেই যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার বোহাইল ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ধারাবর্ষা গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে।গত ১৫ দিনে নদীভাঙনের শিকার হয়ে ১০০টির বেশি

পরিবার এলাকাছাড়া হয়েছেন। কয়েকদিন আগেই বসতবাড়ি ভেঙে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৫০টি পরিবারের লোকজন। এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২০০ বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়েছে যমুনায়। ভাঙন এলাকায় নদীতীরের ৫০ মিটারের মধ্যে বসবাস করছেন প্রায় ১৫টি পরিবারের লোকজন।

ভাঙন হুমকিতে রয়েছে এ গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধারাবর্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর ১৩টি মসজিদ এবং বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি ভাঙন এলাকার মূল তীর থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে অবস্থান করছে। সেখানে চলছে নতুন ভবন নির্মাণকাজ। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এ গ্রামের লোকসংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।

এছাড়া ভাঙন হুমকিতে রয়েছে এ উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ধারাবর্ষা ফরেস্ট বাগান। যেখানে ১হাজার হেক্টর জমিতে সরকারের রয়েছে কয়েককোটি টাকার মেহগনি বৃক্ষ। এ স্থানে প্রতিবছর বনভোজন করতে হাজারো দর্শনার্থী আসেন।

কয়েকদিন ধরেই পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী, বোহাইল, হাটশেরপুর, সদর ও চন্দনবাইশা ইউনিয়নের বাসিন্দারা বন্যার আতঙ্কে আছেন। এসব ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী ১২২টি চরের হাজারো পরিবার পানিবন্দি হতে শুরু করেছে। তারা বাড়িঘর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ছোট কুতুবপুর গ্রামের পয়ষ্িট্ট বছর বয়সী মোশাররফ হোসেন বলেন, গত কয়েকদিনে পানি বেড়ে আমার বাড়ির চারপাশে পানি এসেছে। আমার বাড়ির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং গৃহপালিত পশুপাখিগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এভাবে পানি বাড়লে দু-একদিনেই বাড়িতে পানি উঠবে।

কাজলা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া চরের ইউপি সদস্য মোহন মিয়া জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার যমুনা চরে বসবাসরত এলাকাবাসী তাদের পরিবার পরিজন, পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং গৃহপালিত পশু পাখি নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া শুরু করে দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট বোহাইল ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই আমার ইউনিয়নের ধারাবর্ষা এবং বোহাইল চরে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এলাকাবাসী ভিটেমাটি ছাড়ছেন। এভাবে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে এ ঐতিহ্যবাহী গ্রামের ১৫ হাজার লোকজন বাস্তুচ্যুত হবেন এবং এখানে সরকারের শত কোটি টাকার গাছ যমুনাগর্ভে বিলীন হবে।

এদিকে ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর ভাঙন ও পানি বৃদ্ধি নিয়ে কথা বললে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী নিবারণ চক্রবর্তী জানান, রবিবার বিকাল ৩টায় পানির উচ্চতা ১৬.১৬ মিটার। অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ধুনটে যমুনার পানির বিপৎসীমা ১৬.২৫ মিটার। অর্থাৎ পানি বিপৎসীমার মাত্র ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীর পানি বৃদ্ধি হয়ে বন্যায় প্লাবিত হলে কিম্বা ভাঙন সৃষ্টি হতে পারা এলাকারগুলোর সব সময় মনিটরিং চলছে। যেকোন ধরণের সমস্যায় প্রস্ততি রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, যেহেতু উত্তরে পানি কমার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। তাই সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি দু’একদিন বৃদ্ধি পেয়ে, অপরিবর্তিত রয়েছে, আবারো কমতে শুরু করবে। বোহাইল ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকাটি খুব শিগগির পরিদর্শন করে সেখানে ভাঙন প্রতিরোধে ১০ হাজার ৫’শ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে, এবং আরও ৩হাজার ব্যাগ প্রস্তুতকরণ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) সবুজ কুমার বসাক বলেন, বন্যা বা নদী ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে যেসব স্থানে ভেঙ্গে যাচ্ছে, সেথায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া যে কোনো বড় ধরনের বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান বলেন, সারিয়াকান্দি যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকাবাসীরা নদী ভাঙনের পরে ও আগে ক্ষতিসাধিত হয়ে থাকে। বন্যা কবলিত এ অঞ্চলের মানুষদের দূর্ভোগের কথা জানতে পেয়ে ‘মানবতার মমতাময়ী মা’ বলে খ্যাত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই সাহায্যের হাত প্রসারিত করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবেনা। এ দু উপজেলার মানুষের প্রতি তার সুদৃষ্টি রয়েছে। অচিরেই বন্যা কবলিত মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পাশে দাঁড়াবো।

Leave A Reply

Your email address will not be published.