বাংলাদেশে বিপুল মার্কিন বিনিয়োগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

১১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ তাদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রদানের প্রস্তাব দিতে পেরে সন্তুষ্ট। আমি মার্কিন বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ওষুধ, ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ, জাহাজ নির্মাণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরিতে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে চাই।’

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থানস্থলের হোটেলে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত উচ্চ-স্তরের পলিসি গোলটেবিলে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের উদার বিনিয়োগ নীতি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা, কর অবকাশ, রয়্যালটির রেমিটেন্স, অনিয়ন্ত্রিত প্রস্থান নীতি এবং পুরোপুরি প্রস্থানের সময় লভ্যাংশ ও মূলধন নিয়ে যাওয়ার সুবিধা।’

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ (এসইজেড) এবং বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে ছয় লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সিং আইটি পেশাদার রয়েছে, ফলে, বাংলাদেশ আইটি বিনিয়োগের জন্য সঠিক গন্তব্য। তাছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে দক্ষ মানবসম্পদ বাংলাদেশে একটি অতিরিক্ত সুবিধা। এমনকি যদি প্রয়োজন হয়, আমরা মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ডেডিকেটেড বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব করতে পারলে খুশি হব। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আঞ্চলিক সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অগ্রগামী এবং বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হওয়ার অভূতপূর্ব সম্ভাবনা প্রদান করেছে। ভারত, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ চার বিলিয়ন মানুষের সম্মিলিত বাজারের মাঝখানে রয়েছে।’

প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন হচ্ছে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এভাবে, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক, তৃতীয় বৃহত্তম সবজি উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে, চতুর্থ বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী এবং বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ মৎস্য উৎপাদনকারী হয়েছে। বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে তার প্রতিবেশী দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক কূটনীতি চালিয়ে যাবে। আমরা ক্রমাগত আমাদের ভৌত, আইনি এবং আর্থিক অবকাঠামো উন্নত করছি এবং দেশে যোগাযোগ উন্নত করছি। পদ্মা বহুমুখী সেতুর সমাপ্তি অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক সংযোগ উভয়ই উন্নত করেছে, যেখানে ঢাকা মেট্রো-রেল প্রকল্পটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দ্রুত অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা যোগ করবে।’

বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি মর্যাদা থেকে স্নাতক হতে চলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এবং রপ্তানি বাস্কেট বাড়ানোর জন্য তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন। আমি নিশ্চিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চ্যালেঞ্জিং প্রচেষ্টায় আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশীদার হতে পারে। বাংলাদেশ সরকার দেশে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে। আইএলও রোডম্যাপ উদ্যোগ মোকাবেলা করার জন্য কর্মের একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা এবং সময়রেখা প্রদান করে এবং শ্রম খাতে প্রতিকারের পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশ সরকার এ সেক্টরে ক্রমাগত উন্নতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে পর্যাপ্তভাবে নিযুক্ত রয়েছে। মার্কিন সরকার শ্রম ইস্যুতে ৩+৫+১ প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে।’

প্রধানমন্ত্রী ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রতিটি উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন এবং বলেন, ‘আসুন আমরা আবারও একটি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পারস্পরিক অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারিত্বের জন্য আমাদের হাত মেলাই। এ বছর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অংশীদার এবং বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সামরিক-সামরিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসহ বিস্তৃত বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এর ব্যাপক সম্পৃক্ততা রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের প্রসারের মাধ্যমে পারস্পরিক সমৃদ্ধিতে দুদেশের  অভিন্ন লক্ষ্যগুলো প্রতিধ্বনিত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২০২১-২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল প্রায় ১০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানি ছিল প্রায় ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন যেখানে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ একটি শোষণমুক্ত সমাজ এবং পূর্ণ অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে। আমার সরকার বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, “বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা এবং আইসিটি ক্ষেত্রে একটি অনুকরণীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকারের ধারাবাহিকতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ এবং নারীর ক্ষমতায়ন সাফল্যের চাবিকাঠি। বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশকে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ হাতে নিয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে সবুজ সমৃদ্ধির জন্য একটি কৌশলগত রোডম্যাপ। কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বকে একটি স্থিতিস্থাপক বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা দেখিয়েছে। একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও, সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রাথমিক এবং কার্যকর পদক্ষেপের কারণে মহামারী চলাকালীন মৃত্যুর হার খুবই কম ছিল। বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রার জনসংখ্যার ১০২ শতাংশ (১২১ মিলিয়ন) কমপক্ষে দুই ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেয়েছে। এভাবে, আমাদের অর্থনীতি মহামারী মোকাবেলায় দুর্দান্ত স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছে।”

কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি কোভিড-১৯ টিকা অনুদান প্রদান করায় তিনি মার্কিন সরকারের আন্তরিক প্রশংসা করেন।

Comments are closed.