বাক প্রতিবন্ধী হয়েও থেমে নেই পত্নীতলার রাব্বানী

১৪৩

রিফাত হোসেন, পত্নীতলা (নওগাঁ): নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার মহেশপুর গ্রামে তার বসবাস। জন্মলগ্ন হতে কথা বলতে ও শোনতে পায় না সে। আকার ইঙ্গিতে হয় তার চলাফেরা। তবুও থেমে নেই রাব্বানী। নিজের অদম্য ইচ্ছে শক্তি ও জোড় মনোবল নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং শুধু পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন রং তুলির আঁচড়ে।

পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক ভালো ছবি আঁকে রাব্বানী। কখনও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কখনো মা-ছেলে আবার কখনো বা খেয়াপারাপারের দৃশ্য, গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য ফুটিয়ে তুলছেন তার রং তুলির মাধ্যমে। রং তুলিতেই যেন তার মনের ভাষার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। শুধু একাডেমিক জ্ঞানই নয় সে একবার যা দেখেন মুহূর্তের মধ্যে তা আয়াত্ত করে ফেলেন।

রাজশাহী আর্ট কলেজের ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট পড়াশোনা চলমান রয়েছে তার। ইতোমধ্যে তিনি ছবি এঁকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক সহ বিভিন্ন সনদ অর্জন করেছেন। সমাজের বোঝা না হয়ে বরং সমাজের মানুষের জন্য কিছু করতে চান সে।

রাব্বানীর পিতা সাইদুর রহমান জানান, আমি একজন কৃষক মানুষ।  বাড়ী ভিটা ছাড়া নিজের জমিজমা কিছু নেই। ৪ ছেলে-মেয়ের মধ্যে রাব্বানী ৩য়। আমি মারা গেলে সে যেন কারো কাছে অবহেলিত না হয়। ছোট থেকে অনেক কষ্টে বড় করেছি এখন তার সরকারী কোন কর্মসংস্থান হলে একটু স্বস্তি হতো।

তার মা সেলিনা বেগম বলেন, জন্মের পর হতে মানুষের অনেক কটু’কথা শুনেছি। ছোটবেলায় ভর্তি করিয়েছিলাম রাজশাহীর হাইকেয়ার স্কুলে। অক্ষর চেনা, লেখা, কথাবলা চেষ্টার দু’বছরের ঔ কোর্সটি এক বছর এই আয়ত্ব করে ফেলে। অনেক কষ্টে তাকে বড় করি। ছেলেটার কোন একটা গতি দেখে যেতে পারলে আমি মরেও শান্তি পেতাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাক প্রতিবন্ধী হলেও আর ১০ টি শিক্ষার্থীর চেয়ে বরাবরই তার রেজাল্ট ভাল। মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫, বামইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫ এবং মান্দা ভোকেশনাল থেকে এসএসসি পাস করেন। এবং পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী আর্ট কলেজে ভর্তি হন। আর্ট কলেজে এইচএসসি পাস করে এখন আর্ট কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন তিনি।

Comments are closed.