ভোটদানের বিশ্ব রেকর্ড গড়ল ভারত

0 ৯৫
ছবি- সংগৃহীত

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট দেওয়ার রেকর্ড হয়েছে। এ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৬৪ কোটি ২০ লাখ ভোটার। এত মানুষের ভোটদানের বিষয়টি উল্লেখ করে এই নির্বাচনকে ‘বিস্ময়কর ঘটনা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) রাজীব কুমার।

ভোট গণনার একদিন আগে আজ সোমবার (৩ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এ কথা বলেন। এ সময় লোকসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়া সব ভোটারদের ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ (দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা) জানান তিনি।

সিইসি বলেন, ‘আমরা ৬৪ কোটি ২০ লাখ ভোটারের বিশ্ব রেকর্ড গড়েছি। এটা আমাদের সবার জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর ভোটারের দেড়গুণ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭টি দেশের ভোটারের আড়াই গুণ। গণতন্ত্রের এই উৎসবে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই। ভারতের নির্বাচন নিঃসন্দেহে একটি বিস্ময়কর ঘটনা। পৃথিবীতে এমন ঘটনা আর ঘটেনি।’

সিইসি আরও বলেন, ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৩১ কোটি ২০ লাখ নারী ভোটার তাদের ভোট দিয়েছেন, যা তাদের গত জাতীয় নির্বাচনে ২৭টি ইইউভুক্ত দেশের নারী ভোটারের এক দশমিক ২৫ গুণ, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রতি ইসিআইয়ের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলিত ঘটায়।’

ভারতের এই নির্বাচনে নারী ভোটারদের সংখ্যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের ভোটারদের চেয়ে এক দশমিক ২৫ গুণ বেশি জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ভোটারদের অংশগ্রহণ আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। তারাই আমাদের গণতন্ত্রের নায়ক। স্বাধীনতার আগে থেকেই তারা ভারতকে দেখেছে এবং গত ৭০ বছর ধরে তাদের অবদান দিয়ে এই দেশকে রূপ দিয়েছে।’

নির্বাচনি কর্মীদের সতর্কতার কারণে পুনর্নির্বাচন অনেক কমানো গেছে বলে জানান রাজীব কুমার। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে ৫৪০টি পুনর্নির্বাচন দেখা গিয়েছিল, সেখানে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আমরা ৩৯টি পুনর্নির্বাচন দেখেছি, যার মধ্যে ২৫টি পুনর্নির্বাচন কেবল দুটি রাজ্যে।’ এ ছাড়া নির্বাচনি প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা রাখায় জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘এ রাজ্যে ভোটদানের হার গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।’

সিইসি আরও বলেন, ‘২৩টি দেশের ৭৫ জন পর্যবেক্ষকের একটি বৈশ্বিক প্রতিনিধি দল ভারতের এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে। ভারতের নির্বাচন পরিকল্পনা, পরিচালনা ও স্বচ্ছতার মাত্রা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন তারা।’ তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে মোকাবিলা করা হয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনে কোনো সহিংস ঘটনা নির্বাচন কমিশন দেখেনি।

রাজীব কুমার বলেন, ‘এই নির্বাচনে আমরা কোনো সহিংসতা দেখিনি। এই পর্যায়ে আসতে দুই বছরের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করার রেকর্ড তৈরি করেছে। যা ২০১৯ সালে বাজেয়াপ্ত করা অর্থের প্রায় তিনগুণ।

৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার জন্য শক্তিশালী ও নির্ভুল প্রক্রিয়া তৈরি করা হয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

সিইসির সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ও সুখবীর সিং সান্ধু। এদিকে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) লোকসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের মতো জয় উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শনিবার বুথফেরত কয়েকটি সমীক্ষায় জানা গেছে, কেন্দ্রের শাসক দল অন্যান্য দল শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্যেও নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে। অন্য আরেকটি বুথফেরত সমীক্ষায় ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতাদের ঘোষণা করা ৪০০ আসনের লক্ষ্যে ‘৪০০ পার’ এর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারে।

গত ১৯ এপ্রিল থেকে ভারতে সাত দফায় লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল এর ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.