মাতৃ ও শিশুপুষ্টি উন্নয়ন কার্যক্রম টেকসই করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : প্রধানমন্ত্রী

১৩৬
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটি সুস্থ ও মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার বৃদ্ধি এবং মাতৃ ও শিশুপুষ্টি উন্নয়নের কার্যক্রম টেকসই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২২’ উপলক্ষ্যে আজ রোববার দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-২০২২’ পালন করা হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে   শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য : ‘মায়ের দুধ পান: শিক্ষা ও সমর্থনের পদক্ষেপ’ যথার্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃদুগ্ধপান শিশুদের পুষ্টিপূরণ এবং সম্মিলিত শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। মাতৃত্বকালীন ছুটি বেতনসহ ছয় মাসে উন্নীত করেছি। সাধারণভাবে পিতৃত্বকালীন ছুটির বিধান রয়েছে। প্রতিবছর শিশু অপুষ্টির হার ১.২৭ শতাংশ কমেছে। এসডিজি-৩ শিশু সম্পর্কিত সূচকগুলো—পাঁচ বছর বয়সের নিচে শিশু মৃত্যুহার ৩১ এবং নবজাতকের মৃত্যুহার ১৭ এরই মধ্যে মাইলফলক অতিক্রম করেছে সময়ের আগে।

এসডিজি-২-এর শিশু সম্পর্কিত সূচকগুলো, যথা—কৃশকায় শিশুর হার আট ভাগে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের খুব কাছাকাছি রয়েছে। এসডিজি-২-এর লক্ষ্যমাত্রা পূরণে খর্বাকৃতি শিশুর হার ৩১ ভাগ থেকে ২৫ ভাগ এবং কম ওজনের জন্ম নেওয়া শিশুর হার ২২ ভাগ থেকে ২০ ভাগ এ কমিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের শতকরা ৬৫ ভাগ শিশু ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খায়। ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ-২০২০-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৯৭টি দেশের মধ্যে ৯১.৫/১০০ স্কোর পেয়ে সারা বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করে গ্রিন জোনে আছে।

শেখ হাসিনা বলেন,  গুঁড়াদুধের বিপণন নিয়ন্ত্রণে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, শিশুখাদ্য ও বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য এবং তা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি বিপণন নিয়ন্ত্রন আইন, ২০১৩ এবং এর বিধিমালা-২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। শিশুখাদ্য ও বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য এবং তা ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ আইন)-২০১৩ প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, রেলস্টেশন সব জায়গায় ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছি। এরই মধ্যে আমরা দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে, চিড়িয়াখানায়, বিভিন্ন রেলস্টেশনে, শপিং মলে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপন করেছি। এ ছাড়া হাইকোর্ট থেকে বিভিন্ন শিল্প কারখানাগুলোতে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ সেক্টর হেলথ, নিউট্রিশন ও পপুলেশন প্রোগ্রাম এবং দ্বিতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনার আওতায় মাতৃ ও শিশু পুষ্টিসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে মা ও শিশুর পুষ্টি উন্নয়নের লক্ষ্যে মাত্রা সহায়ক দলের প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি আশা করেন, অতি শিগগিরই সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা মাতৃ ও শিশু পুষ্টি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অর্জন করব। তিনি দেশের সর্বস্তরের শিশুকে ছয় মাস শুধু মায়ের দুধ পান করানো, ছয় মাসের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার খাওয়ানো এবং দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ চালিয়ে যাওয়ার অগ্রগতির ধারাকে জোরদার করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, জাতীয় পুষ্টিসেবা ও বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনসহ (বিবিএফ) সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান। ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২২’- উপলক্ষ্যে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

Comments are closed.