রাজশাহীর গাছিরা খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত

৮১

রাইন মোস্তাফী নিশাতঃ শীতের আগমন শুরু হলেই রাজশাহীতে শুরু হয় খেজুর গাছ পরিচর্যা।  শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে তা থেকে তৈরি হয় গুড়। ইতোমধ্যেই রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ কাটায় (পরিচর্যা) ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর গাছিরা। গাছ কাটার ১০-১২ দিন পর থেকেই শুরু হবে রস সংগ্রহ। রাজশাহীর বেশির ভাগ গ্রামের পথ দিয়ে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে খেজুর গাছ। জমির প্রতিটি আইলে খেজুর গাছ লাগিয়েছেন গ্রামের কৃষকরা। শীত মৌসুমে এসব গ্রামে খেজুরের রস বিক্রি ও গুড় তৈরির কাজ চলে পুরো দমে। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি।
জানাগেছে, আসছে শীত, তাই চলছে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। খেজুরের গুড় তৈরি জন্যে সকাল থেকেই খেজুর গাছের ডালপালা পরিস্কারে ব্যস্ত রাজশাহীর গাছীরা। রাজশাহী জেলার চারঘাট, বাঘা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর এই ৪ উপজেলায় রাস্তার ধারে, জমির আইলে, জমির ভেতরে খেজুর গাছের সংখ্যা বেশি। ইতিমধ্যেই গাছীরা দা, দড়ি, হাসুয়া, বাটাল, বাইলিট, বালি সহ প্রয়োজনীয় নিয়ে গিয়ে, গাছের ডালপালা কেটে উঠা নামার জন্য থাক তৈরি করছেন। আর কিছু দিন পর রস নামার জন্য ঘাট তৈরি করে, ফাতা লাগানো হবে। তারপর থেকেই শুরু হবে রস সংগ্রহ। সেই রস থেকেই তৈরি হবে সুস্বাধু গুড়। সেই গুড় হাট বাজারে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশেও বিক্রি করেন তারা। আর এই মৌসুমে খেজুর গুড় তৈরিতে পরিবারের লোকজনও সহায়তা করে থাকেন।
চকদূলভপুর গ্রামের সোলেমান আলীর খেজুর গাছ আছে ১২০টি। রস সংগ্রহের জন্য তারা এখন খেজুর গাছের আগা ঝোড়া, চাঁচ দেওয়া ও নলি মারায় ব্যস্ত। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুমের পুরো ৪ মাস তারা বাড়িতে খেজুরের গুড় ও পাটালি তৈরি করে। ওই সময় তাদের প্রতিদিন আয় হয় ১ থেকে ২ হাজার টাকা। তাদের মতে, কোনো কৃষকের যদি ২০০ খেজুর গাছ থাকে তাহলে পুরো বছরের সংসার ভালোভাবে চলে যাবে।
চকদূলভপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী জানান, শীত মৌসুমে ঢাকাসহ সারা দেশের ব্যাপারীরা রাজশাহী বানেশ্বর হাট, দুর্গাপুর, ঝলমলিয়া গুড়ের হাটে আসেন। তারা এসব হাট থেকে খেজুরের গুড় ও পাটালি কিনে সারা দেশে সরবরাহ করেন। অনেকেই রাজশাহীর খেজুরের গুড় ও পাটালি দেশের বাইরেও পাঠান।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছাঃ উম্মে ছালমা জানান, রাজশাহী জেলায় খেজুর গাছ রয়েছে প্রায় ১১ লাখ ১২ হাজার ১০৬ টি, যা থেকে এবার ৯ হাজার ৬৩.৬ মেক্টক টন গুড় উৎপাদন হতে পারে। এ জেলার খেজুরের গুড়ের সুনাম দেশজোড়া। শীত মৌসুমে খেজুরের গুড় ও পাটালি বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন চাষিরা।