লালমনিরহাটে প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিতের ঘটনায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ দুজন প্রত্যাহার

0 ১,০৬৪

Lalmonirhatজিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালরায় পঞ্চপথী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে জুতাপেটার ঘটনায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতাউজ্জামান রঞ্জু ও অভিভাবক সদস্য আব্দুল মতিনকে পরিচালনা কমিটির পদ থেকে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর পরই ২৪ আগস্ট বুধবার রাতে তাদেরকে ম্যানিজিং কমিটির পদ থেকে প্রত্যাহার করে চিঠি ইস্যু করা হয়।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য্য স্বাক্ষরিত চিঠির স্মারক নম্বর মাউশিবোদি/বিদ্যাঃ/অনু/১৫৫৪/(১১) মোতাবেক গত ২৪আগস্ট থেকে গোপালরায় পঞ্চপথী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতাউজ্জামান রঞ্জু ও অভিভাবক সদস্য আব্দুল মতিনকে প্রত্যাহার করা হয়। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ হোসেনের নির্দেশে গঠিত দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্তে জুতাপেটার ঘটনা প্রমাণিত হয়। এছাড়া ওই ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় সভাপতি আতাউজ্জামান রঞ্জু ও অভিভাবক সদস্য আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ২৩ আগস্ট রাতে একটি মামলা দায়ের করেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতাউজ্জামান রঞ্জু ও অভিভাবক সদস্য আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে তদন্তে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের ৩৮ ধারা মোতাবেক তাদেরকে ম্যানেজিং কমিটির পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
প্রসঙ্গত, বিদ্যালয়ের তহবিলে থাকা দেড় লাখ টাকা বেশ কয়েকদিন ধরে ধার হিসেবে চাচ্ছিলেন কমিটির সভাপতি আতাউজ্জামান রঞ্জু। কিন্তু প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম টাকা দিতে অপারগতা জানিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভায় বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেন। ফলে গত রবিবার(২১-আগস্ট) সকালে প্রধান শিক্ষককে জরুরি সভা ডাকার পরামর্শ দেন সভাপতি। এরপর ওইদিন বিকালে ডাকা হয় সভা। সভায় উপস্থিতরা রঞ্জুর চাপে একপর্যায়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা ধার দেওয়ার বিষয়ে একমত হন। কিন্তু বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তিনি। এতে তিনি উত্তেজিত হয়ে রেজুলেশন বইয়ের কয়েকটি পাতা ছিঁড়ে ফেলে নিজের পায়ের জুতা খুলে উপস্থিত সবার সামনেই প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীরকে পেটাতে থাকেন। এসময় তিনি অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ ও নানাভাবে হুমকীও দেন তাকে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার(২২-আগস্ট) ক্লাস বর্জন শুরু করে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। সভাপতির শাস্তি ও অপসারণ দাবিতে তারা সোমবার ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধনও করেন। এসব বিষয়টি গোটা জেলায় চাউর হয়ে পড়লে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশে পৃথক দুইটি তদন্ত টিম সরজমিনে তদন্ত করে ২৪ আগস্ট রিপোর্ট দাখিল করেন।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতাউজ্জামান রঞ্জ ও অভিভাবক সদস্য আব্দুল মতিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য্য সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘তদন্তে প্রমাণ পাওয়ায় বিষয়টি গুরুতর অপরাধ বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩৮ ধারা মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আতাউজ্জামান রঞ্জু ও অভিভাবক সদস্য আব্দুল মতিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। খুব শিঘ্রই সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।’
কালীগঞ্জ থানার ওসি আরজু মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেপ্তারে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.