শিবগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে গরু রাখাল নিহত

২৪৭

ফয়সাল আজম অপু, বিশেষ প্রতিনিধি: ভারতে অবৈধভাবে গরু আনতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের গুলিতে মো. শামিম রেজা (২৫) নামে এক রাখাল নিহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও এক রাখাল। সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোররাতে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ওপারে ভারতের চাঁদনিচক এলাকার মরাগঙ্গা নদীতে এ ঘটনা ঘটেছে।

শামিম শিবগঞ্জ উপজেলার দুলর্ভপুর ইউনিয়নের সড়াপাড়া গ্রামের বাইরুল ইসলামের ছেলে। আহত গুলিবিদ্ধ রাখাল একই উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের বিশরশিয়া গ্রামের পোড়াপাড়া মহল্লার মৃত সোহবুল হকের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩৩)। সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত মরদেহ ভারতের মাটিতেই ছিল বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার।

শামিম রেজার মা শেরিনা বেগম বলেন, এর আগে কোনোদিন আমার ছেলে ভারতে যায়নি। হঠাৎ করে গতকাল সন্ধ্যার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছে, রাতে আর আসেনি। হঠাৎ সকালে উঠে শুনছি বিএসএফের গুলিতে আমার ছেলে নিহত হয়েছে। কিন্তু কীভাবে কী হলো আমি জানি না। এখন পর্যন্ত আমার ছেলের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।

নিহতের স্বজন মোশাররফ হোসেন বলেন, গত (রোববার) সন্ধ্যায় গরু আনার জন্য কয়েকজন রাখালের সঙ্গে ভারতের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় শামিম রেজা। এরপর অন্যরা বাড়ি ফিরে এলেও নিখোঁজ রয়েছে শামিম। ফিরে আসা গরুর রাখালরা জানান, শামিম রেজা বিএসএফের গুলিতে মারা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম বলেন, গতরাতে ১০-১২ জন রাখাল মিলে ভারতে গরু আনতে যায়। তারা বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের দুই কিলোমিটার ভেতরে বিএসএফ চাঁদনিচক ক্যাম্পের কাছে মরাগঙ্গা নদী পার হওয়ার সময় বিএসএফ সদস্যরা তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন শামিম রেজা। এছাড়া হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুত্বর আহত হন শরিফুল ইসলাম। নিহত ও আহত ব্যক্তির বাড়িতে পুলিশ এসে ঘিরে রাখলেও তারা দুইজন কোথায় আছে তা জানা যায়নি।

তিনি বলেন, আহত শরিফুলকে রাজশাহীর কোনো এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বেঁচে যাওয়া অন্য রাখালরা একত্রিত হয়ে মরদেহ উদ্ধার করে আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। শুধু রক্ত দেখে ফিরে এসেছে। তাদের ধারণা বিএসএফ অন্য ঘটনার মতোই মরদেহ গুম করে দিয়েছে।

পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেন, সকাল থেকেই পুলিশের মাধ্যমে সীমান্তে গরু আনতে গিয়ে হতাহতের ঘটনা শুনেছি। এতে একজন মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। কিন্তু তাদের পরিবার পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতে মুখ খুলছে না এবং পুলিশ বা বিজিবিকে কিছু বলছে না। আহত ব্যক্তিকে গোপনে চিকিৎসা দিচ্ছে তার পরিবার।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ হোসেন বলেন, সকাল থেকেই এমন নিহতের গুঞ্জন আমরাও শুনেছি। তবে নিহত বা আহতদের পরিবার এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে তারা জানালে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। এ নিয়ে বিজিবি সদস্যরাও মাঠে কাজ করছে। তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Comments are closed.