সংসদে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই: ফখরুল

২০৯
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংসদে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। কোনো জবাবদিহিতা নেই। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে গতকাল সোমবার অ্যাসাসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব অভিযোগ করেন।

অভিযোগে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা থেকে টরন্টো (কানাডা) সরাসরি ফ্লাইট হচ্ছে। একটা ট্রায়াল ফ্লাইট হয়েছে, এখন চালু করবে। বিমানের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, এই ফ্লাইটটা কেন করা হলো, তা আমরা জানি না। কারণ এটা কোনোমতেই লাভজনক ফ্লাইট নয়।’

ফখরুল বলেন, ‘এটি করা হয়েছে একটা কারণেই। বেগমপাড়াতে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাদের সুবিধার জন্য অথবা সরাসরি এখান (বাংলাদেশ) থেকে টাকা পাচার করার জন্য। সুটকেসে ভরে, ট্রাংকে ভরে টাকা পাচার করার জন্য।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটার কোনো জবাবদিহিতা নেই। সংসদে এসব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। কারণ এই সংসদে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা পেশাজীবীরা নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করেন, উজ্জীবিত করেন। দেশকে বাঁচানোর দায়িত্ব একা রাজনৈতিক দলের না, সবার। সেখানে পেশাজীবীদের একটা বড় ভূমিকা থাকে।’

দেশের চিত্র তুলে ধরে অ্যাসাসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সদস্যদেরকে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা একটি ভয়াবহ অবস্থায় আছি। আজকে দ্রব্যমূল্যের যে হিসাবটা আপনারা এখানে দিয়েছেন, দুর্নীতির যে হিসাব আপনারা দিয়েছেন—এগুলো যদি সঠিকভাবে লক্ষ্য করা হয়, তাহলে শিউরে উঠবেন। যে দেশের মানুষ এতো কষ্ট করে, দিনারাত পরিশ্রম করে উপার্জন করছে, সেই দেশের লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে।’

ফখরুল বলেন, ‘পেশাজীবীরাই ভ্যানগার্ডের কাজটা করেন। অতীতে করেছেন আপনারা। এই সরকারের আমলেও ২০১৩ সালে যে আন্দোলন আপনারা করেছেন, সেটি আমরা সব সময় মনে রাখি। পরবর্তীকালে ২০১৫ সালেও করেছেন। এই আন্দোলনগুলোতে আপনাদের ওপর নির্যাতন আসবে, মামলা হবে। আপনারা পেশাজীবীরা অনেকে যাঁরা বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাঁদের সবার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে…। নির্যাতনের ভয়ে চুপ থাকলে আমরা বাঁচতে পারব না, আমাদেরকে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সময় খুব কম। আমাদের দ্রুত সংগঠিত হতে হবে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তাঁকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসিত হয়ে আছেন, তাঁকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে একটাই মাত্র পথ, সেই পথ হচ্ছে এদেরকে জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরাতে হবে, এদেরকে পরাজিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে সব মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, জাগিয়ে তুলতে হবে। সেই জাগিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে অবশ্যই আমরা অতীতে পেরেছি, ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও পারবো। এদেরকে সরিয়ে অবশ্যই জনগণের সরকার, জনগণের রাষ্ট্র, সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি পুলিশের একটা অনুষ্ঠানে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার কিছু কথা বলেছেন। আমরা বিস্মিত হয়েছি, ক্ষুব্ধ হয়েছি। কী করে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তাঁরা এই ধরনের সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক, অশালীন এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত কথা বলতে পারেন, এটা আমরা চিন্তা করতে পারি না। আমি ভাবতে পারি না- এরা শিক্ষিত মানুষ! এভাবে চাকরি করেন? বড় পদে থেকে তাদের মুখ থেকে যখন এই ধরনের কথা আসে, তখন সেই চাকরি সম্পর্কে, সেই সরকার সম্পর্কে, তাঁদের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা তৈরি হয়।’

ফখরুল বলেন, ‘আমি গতকালও বলেছি, আপনারা মনে করবেন না যে আওয়ামী লীগই শেষ। কোনো দিন শেষ হয় না, অবশ্যই পরিবর্তন হবে। সেই পরিবর্তনে আপনাদেরকে এর জবাবদিহি করতে হবে। আজকে আপনারা সরকারের বেআইনি হুকুম তামিল করছেন, বেআইনি হুকুম তামিল করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে আপনারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো? এখন তাদেরকে (সরকারি কর্মকর্তা) বলতে চাই, সরকারের বেআইনি হুকুম মানবেন না। বেআইনি হুকুম মানলে আপানাদের ওই অবস্থায় (নিষেধাজ্ঞা) পড়তে হবে।’

Comments are closed.