সরকার ভয়াবহ দানবে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল

২১৬
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ শনিবার দুপুরে ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : সংগৃহীত

তেলের দাম বাড়ানোয় সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ সরকার মানুষের জন্য ভয়াবহ দানবে পরিণত হয়েছে। তাই এই সরকারকে সরিয়ে দেওয়াই হচ্ছে এখন বিরোধীদের একমাত্র কাজ।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ শনিবার দুপুরে ছাত্র সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলম হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদ।

মির্জা ফখরুল বলেন, নূরে আলম হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আওয়ামী লীগ টিকেই আছে হত্যা, গুম, খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে। গত ১৫ বছরে ৬শ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ৩৫ লাখ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বিনা কারণে বেআইনিভাবে গণতন্ত্রের মা হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়াকে কারান্তরীণ রাখা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।  সরকার ভয়-ভীতি, মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে।

আইএমএফের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মধ্য রাতে তেলের দাম প্রায় ৫০ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে আজকে সারা দেশে গাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব দেশের মানুষের ওপর পড়বে। মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পরিবহণ ভাড়া, নিত্যপণ্য, চাল, ডালের দাম দিগুণ হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ; যারা দিন আনে দিন খায়। আজকে সকালে দেখলাম কাঁচামরিচের দাম তিনশত টাকা। মানুষের উপর নির্যাতন চলছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন ঐক্যবদ্ধ হই, এই ভয়াবহ অগণতান্ত্রিক সরকারকে সরাতে হবে। এখন আর সময় নেই।

প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, চক্রান্তের কথা বলেন, চক্রান্ত আপনারা করেন। আমরা করি না। আমর প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছি, এই সরকারকে নামিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নূরে আলম এবং আবদুর রহিম জীবন দিল কেন? জনগণের দাবি আদায় করতে গিয়ে। আজকে ছাত্রদল এ সমাবেশ আয়োজন করেছে, অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা কোথায়? আন্দোলন সফল করতে হলে সবাইকে আন্দোলনে যোগ দিতে হবে।

দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ভোলা জেলা ছাত্রনেতা নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুর রহিমকে হত্যা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার হাত রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, তিনি আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। সেই জন্যই আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন,  দেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা যদি পদত্যাগ না করে জনগণ গণভবন থেকে টেনে বের করে আনবে। নির্দলীয় সরকার দিতে হবে। না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরে যাব না।

ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না প্রমুখ। নূরে আলমের হত্যার বিচারসহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।

বিদ্যুতের লোডশেডিং ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৩১ জুলাই ভোলায় সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলের করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলি চালায়। গুলিতে ঘটনাস্থলে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম মাতবর নিহত হন। গুলিবিদ্ধ আরও অন্তত ২৪ জন নেতাকর্মী ভোলা, বরিশাল ও ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলম গত বুধবার ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইভ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান। এই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার থেকে ৯ দিনের কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন ও দোয়া অনুষ্ঠান করে বিএনপি। এই কর্মসূচি আগামী রোববার পর্যন্ত চলবে।

একই ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার কৃষক দল, সোমবার যুবদল, ১০ আগস্ট শ্রমিক দল, ১১ আগস্ট মহিলা দল ও পর দিন স্বেচ্ছাসেবক দল সমাবেশ করবে।

Comments are closed.