হাইকোর্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে ‘গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা’: রিজভী

0 ২৬৯

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম: হাইকোর্ট এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।ব্রেকিংনিউজ
রিজভী বলেন, ‘অবৈধ সরকারের চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে দেখে আবারও অস্থির হয়ে গেছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আবারও উদ্ভট, বানোয়াট, আজগুবি মামলার প্লাবন বইয়ে দিচ্ছে। সরকারের মত পুলিশরাও এখন গায়েবি তথ্য উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে সিনিয়র নেতাদের নামে একের পর এক মামলা দিয়েই যাচ্ছে। মৃত ব্যক্তি, কারাবন্দি নেতাদেরও গায়েবি মামলার পাইকারি আসামি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার বর্তমানে নতুন কোনও ইস্যু পাচ্ছে না। তাই আগের মত আবার আগুনের খেলা শুরু করছে। বুধবার মধ্যরাতে এই মধ্যরাতের ভোট ডাকাত সরকার তাদের ‘খয়ের খাঁ’ পুলিশকে দিয়ে আমাদের ১৩৫ জন নেতাকে আসামি করে মোটরসাইকেল পোড়ানোর উদ্ভট দুই মামলা করেছে। হাইকোর্ট এলাকায় বেওয়ারিশ দুই মোটর সাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা।’

রিজভী বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার জন্য সরকারের বিশেষ বাহিনীর পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ। ঘটনার পর ডিএমপি রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এস এম শামীম সাংবাদিকদের বলেছেন, কারা কী উদ্দেশ্যে গাড়িগুলোতে আগুন দিয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মোটরসাইকেল তিনটির মালিকানা কেউ দাবি না করায় মনে হচ্ছে আগুনের ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক। ঘটনার পর এখনো বেওয়ারিশ মোটরসাইকেলগুলো মালিক খুঁজে পায়নি পুলিশ! অথচ মামলা হয়েছ ১৩৫ জন নেতার নামে। কি হাস্যকর মামলা যে, ৩টি মোটরসাইকেল পোড়াতে ১৩৫ নেতার প্রয়োজন পড়লো। সবাই এটা জানেন যে ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামী লীগের লোকজন এবং সরকারের বিশেষ বাহিনীর পরিকল্পিত একেকটি ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির নামে মামলা দিচ্ছে।’

রিজভী আরও বলেন, ‘হাইকোর্টের সামনে মোটরসাইকেলে আগুন দেয়ার ঘটনায় করা মামলায়  ১৩৫ জনের মধ্যে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারকে আসামি করা হয়েছে। যিনি বহুদিন ধরে জেলে আছেন। গত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজ কারাগারে, অথচ তাকেও আসামি করা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, জয়নাল আবেদিন (খালেদা জিয়ার আইনজীবী), শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আমি  বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায়, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ঢাকা জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, হাবিবুর রশীদ হাবিবকে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলবো- এসব করে লাভ নেই। এবার ক্ষমতা ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হন। এই মামলা সুপরিকল্পিত এবং গায়েরি মামলা। এ সমস্ত ঘটনায় যে সরকারের লোকেরাই জড়িত সেটির অতীতে অনেক নজির রয়েছে, তাদের লোকেরা সেটি স্বীকার করেছেন।’

রিজভী বলেন, ‘গত বছর জুড়ে গায়েরি মামলার কথা মানুষ ভুলে যায়নি। কবরে শায়িত লাশের নামে, হজ পালনকালে সেই ব্যক্তির নামে, হাসপাতালে শায়িত পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির নামে, প্রবাসীর নামে গায়েবি মামলার মতোই এই মামলাটিও একটি গায়েবি মামলা। দেশনেত্রীর জামিন শুনানির আগের দিন হাইকোর্ট সংলগ্ন এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বেষ্টিত ছিল এবং একধরনের সান্ধ্য আইন জারি ছিল, সেখানে মোটরসাইকেলে আগুন লাগানোর ঘটনা তারা ছাড়া কারও পক্ষেই সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘এভাবেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে কব্জায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকার টিকে আছে। আইন-আদালত, প্রশাসন, পুলিশ সবকিছুই শেখ হাসিনার হুকুমের দাসে পরিণত হয়েছে। উড়ো অবান্তর মিথ্যা প্রচারে পারঙ্গম শেখ হাসিনা। গণতন্ত্র ধ্বংসকারী তাঁর সরকার যেকোন মূহুর্তে বিরোধীদের দমাতে যেকোন জুলুমের পন্থা অবলম্বন করে। কারণ এই জনবিরোধী সরকার যেকোন সময় নাশকতা করতে তাদের সুদীর্ঘ বাহু বিস্তৃত করে। এই দুঃসময়ে জনগণ যখন তখন আতঙ্কের শিহরণ অনুভব করে। কারণ কারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে নাশকতা করার সমস্ত ইন্সট্রুমেন্ট শেখ হাসিনার কাছেই আছে। এই কারণেই গতকাল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ আদালতে জামিন দেয়া হয়নি। গতকাল বেগম জিয়াকে আদালতের জামিন না দেয়ার সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনার ডিক্টেশনে, অ্যাটর্নি জেনারেল সেটি লিপিবদ্ধ করে আদালতকে দিয়ে বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করেছেন।’

গতকাল বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশ ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে উল্লেখ করে আটককৃতদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন রিজভী।

এছাড়াও গতকাল বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নামে অসত্য এবং সম্পূর্ণরুপে চক্রান্তমূলক বানোয়াট মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাঁদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান তিনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.