বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনাসভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে সংবর্ধনা প্রদান

২৭২

রাজশাহী প্রতিনিধি: ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস, বাঙালির গৌরবময় বিজয়ের পঞ্চাশ বছর। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে আজকের এই দিনে ত্রিশ লাখ তাজা প্রাণ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালি জাতি অর্জন করে এক ঐতিহাসিক বিজয়। তাই দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গৌরবময় বিজয়ের পঞ্চাশ বছর উপলক্ষ্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনাসভা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ সংবর্ধনা গ্রহণ করেন।

বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ুন কবীর উক্ত সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক, সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা তালুকদার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আব্দুল হাদী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. এমদাদুল হক, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বক্তাগণ ইতিহাসের মহানায়ক স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাসহ সকল শহিদদেরকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

অনুষ্ঠানে ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিল আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা তা প্রমাণ করতে পেরেছি। এখন আমাদের ১ টাকা পাকিস্তানের ২ দশমিক ৩৮ রুপির সমান, এটা কি বিজয় নয়? এসময় বিভাগীয় কমিশনার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লুুৎফুন নাহার লতার লেখা ‘প্রতিশোধ’ কবিতা ‘যদি একশো, বছরও লাগে, লাগুক/আমি তবুও তাঁর হত্যার প্রতিশোধ নেব…’ আবৃত্তি করেন। তিনি বলেন, আমরা এই প্রতিশোধ কিভাবে নেব? আমাদের এই প্রতিশোধ উন্নয়নের মাধ্যমে নেব। সকল বাঁধা-বিপত্তি, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমরা পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেল করতে পেরেছি, এটাই আমাদের প্রতিশোধ। বর্তমানে আমরা বিশে^ কৃষিপণ্য উৎপাদনে ১ থেকে ১০ এর মধ্যে আছি। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন বলেন, এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা বলবে, আমরা শুনব। তাঁরা সরাসরি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে আর আমরা ইতিহাস পড়ে জেনেছি। আমার সামনে উপবিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের দেখলেই বুঝা যায় তাঁরা ছিল কৃষক, শ্রমিক ও অসহায় মানুষ। তাঁরা কখনো নিজের স্বার্থে যুদ্ধ করেনি, দেশের স্বার্থে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছে। তাঁদের আত্মত্যাগের কারণেই আজ আমরা সফলতা ভোগ করছি।

আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তি’র এই দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃতে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পেয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশে^ পরিণত হব। এসময় তিনি নতুন প্রজন্মকে কিভাবে স্বাধীন বাংলা পেলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরামর্শ দেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. এমদাদুল হক বলেন, বুকের ভিতর লুকানো কথা মনে হলে কান্না আসে। বঙ্গবন্ধু আজ বেঁচে থাকলে গোটা পৃথিবী একজন আদর্শ নেতা পেতো। সমালোচনা করা সহজ কিন্তু কাজটা করা কঠিন। বঙ্গবন্ধু করে দেখিয়েছেন।

আজকের দিনটি সম্মানের দিন উল্লেখ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা বলেন, জাতির পিতার একক নেতৃত্বে অর্জিত আজকের এই স্বাধীনতা। শৈশব থেকে বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রতিবাদী, তিনি ছিলেন প্রতিবাদী নেতা। তিনি অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতেন।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আব্দুল হাদী বলেন, নির্যাতিত জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা রক্তের বিনিময়ে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। পিতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলব না।

এদিন বিকেল সাড়ে চার’টায় বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, আরএমপি’র কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সরকারি/বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা নগরীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়াম থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একযোগে শপথ বাক্য পাঠ করেন।

Comments are closed.