খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করছেন দেশের বিজ্ঞানীরা : কৃষিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে খাদ্য নিরাপত্তায় অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি; প্রতি বছর নতুন করে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ২২-২৩ লাখ করে। আবার নানা কারণে চাষযোগ্য আাবাদী জমির পরিমাণও কমছে। ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া একটি দেশের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ। আর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করছেন দেশের বিজ্ঞানীরা।

 

কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি আজ চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরে ব্রি-৮১ জাতের ধান কর্তন ও কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ফসলের নতুন নতুন জাত ও চাষাবাদের নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। ফলে ক্রমশ জনসংখ্যা বাড়লেও খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে।

 

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আজকে বরেন্দ্র অঞ্চলের রহনপুরের এই মাঠে ব্রি ৮১ জাতের ধান কাটা হচ্ছে। এর ফলন অনেক ভাল। বিঘা প্রতি ৩১ মণ অর্থাৎ প্রতি শতকে প্রায় ১ মণ। এটি জনপ্রিয় ব্রি ২৮ ও ব্রি ২৯ জাতের মত। ব্রি ২৮ ও ২৯ দীর্ঘদিন ধরে চাষ হওয়ায় উৎপাদনশীলতা ক্রমশ কমে যাচ্ছিল।

 

সে কারণে এই নতুন ব্রি ৮১ জাতটি কৃষক পর্যায়ে দ্রুত সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, চাষিরাও এ জাতের ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ফলে উচ্চফলনশীল এ জাতটি চাষের মাধ্যমে ধান উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় এটি আশানুরূপ ভূমিকা রাখবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: মঞ্জুরুল হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলারঞ্জন দাশ, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো: বখতিয়ার, বারির মহাপরিচালক ড. নাজিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এএইচএম আবদুর রকিব, কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক মো: নজরুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্স্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর।

ড. শাহজাহান কবীর জানান, উচ্চফলনশীল ব্রি ধান ৮১ জাতটি ব্রি ২৮ জাতের পরিপূরক। কিন্তু এটি ব্রি ২৮ এর চেয়ে সরু। ঝড়বৃষ্টিতে ব্রি ২৮ হেলে পড়ে কিন্তু নতুন ব্রি ৮১ হেলে পড়ে না। তিনি বলেন, এ জাতের ধানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, ধান পাকার পরও পাতাগুলো সবুজ থাকে। মাঝারি উঁচু জমি থেকে উঁচু জমিতে খুব ভালো ফলন দেয়। নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ অঞ্চলে এই ধানের ফলন অনেক ভালো পাওয়া যায়। প্রতি হেক্টরে গড় ফলন ৬.৫ থেকে ৭ মেট্রিক টন।

তিনি জানান, রান্না করার পর এটি বাসমতীর মতো দেড় গুণ লম্বা হয়ে যায়। এই চালে ২৫ শতাংশের ওপর অ্যামাইলোজ থাকে। এতে প্রোটিনের পরিমাণ ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। ভাত ঝরঝরে ও খেতে সুস্বাদু হয়। অন্যদিকে ব্রি ২৮ এ প্রোটিন থাকে মাত্র ৮ শতাংশ। এই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত আতপ চাল বিদেশে রপ্তানিযোগ্য।
ব্রি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

 

Comments (০)
Add Comment