একসময় লাঠি খেলা ছিল গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে জনপ্রিয় খেলা। গ্রাম্য নানা শিল্প-সংস্কৃতির মাছঝ লাঠি খেলা ছিল গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষের চিত্ত বিনোদনের একমাত্র উৎস। ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি বৈশাখি মেলা, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হত।
এ পেশার সাথে যারা জড়িত তারাও তাদের পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছে। ফলে গ্রামের মানুষের বিনোদনের এ খেলাটি এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। সোমবার সন্ধ্যায় শহরের পৌর পার্কে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন মেলায় আসা সাধারণ মানুষকে আনন্দ দিতে আয়োজন করা হয় লাঠি খেলার। গোপালগঞ্জ সদরের সালাম খার দল এতে অংশ নেয়।
কাঁসার শব্দে চারপাশে যেন উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।কাসার বাদ্যের তালে নেচে নেচে লাঠি খেলে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে লাঠিয়ালরা। খেলোয়াড়রা একে অপরের সাথে লাঠি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। লাঠি দিয়ে অন্যের আক্রমন ঠেকিয়েন দেন। আর এরই মাঝে নিজের চেয়ে বড় লাঠি নিয়ে অদ্ভুত সব কসরত দেখিয়ে উপস্থিত সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় ছোট্ট এক শিশু। ক্ষুদে লাঠিয়ালের কসরত শেষ হতে না হতেই আবির্ভূত হন প্রবীণ লাঠিয়াল। দল বেধে আগত দর্শকদের সালাম বিনিময় করেন। এসব দৃশ্য দেখে আগত দর্শকরাও করতালির মাধ্যমে খেলোয়ারদের উৎসাহ যোগায়।
লাঠি খেলার আসরে কখনো কখনো নৃত্যগীত পরিবেশন করা হয়। শুধু তা-ই নয়, কখনো কখনো উজ্জ্বলবর্ণের পোশাক পরে কিছু কৌতুককারী উক্ত অঞ্চলের লাঠি খেলার আসরে উপস্থিত হন এবং তারা সামাজিক রীতি-নীতির নানা রূপ বিষয় নিয়ে কৌতুক উপস্থাপন করে থাকেন।
কালেরক্রমে হারিয়ে যাওয়া এ লাঠি খেলা দেখতে মেলা প্রাঙ্গনে হাজির হন নানা বয়সের সাধারণ মানুষ। ইট-পাথরের টুংটাং আওয়াজকে হার মানিয়ে কিছুটাও হলেও পুরানো দিনের গ্রামীন চিত্ত বিনোদনের সুযোগ পান বয়ো বৃদ্ধারা। আর অনেকেই আবার দেখেছেন প্রথমবারের মত। মেলায় আসা হাজারো দর্শক মেতে ওঠেন আনন্দে।
লাঠিয়াল সালাম খা জানান, কোন পুরস্কার বা টাকার জন্য আমরা লাঠি খেলি না। ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটিকে ধরে রাখতে ও দর্শকদের আনন্দ দিতে আমরা লাঠি খেলে থাকি। আর যে যা দেয় আমরা তা আনন্দেই গ্রহণ করি।
দর্শনার্থী আমির হামজা, সাইফুল ইসলাম, সম্পা সাহা জানান, মাঠের স্বল্পতা আর ভিডিও গেমের কারণে আমাদের শিশুরা ঘরমুখো। প্রথমবারের মত আমরা গ্রামিন লাঠি খেলা দেখলাম। এ খেলা দেখে এতটাই আনন্দ পেয়েছি যে ভাষায় বলা যাবে না। লাঠি খেলাসহ বিভিন্ন গ্রাম্য খেলাকে টিকিয়ে রাখতে ও আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে মাঝে মধ্যেই আয়োজন করা উচিৎ বলে মনে করেন তারা।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার জানান, লাঠি খেলা আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। পৌর পার্কে তিনদিন বাপী উন্নয়ন মেলা হচ্ছে। এ মেলা দেখতে হাজারো দর্শনার্থীরা আসছেন। তাদের চিত্ত বিনোদন দিতে ও ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলা টিকিয়ে রাখতেই আয়োজন করা হয়েছে।