সরেজমিনে জানা গেছে, বগুড়ার শেরপুর বাস কাউন্টার থেকে শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম, কাজিপুর উপজেলার ঢাকাগামী হাজার হাজার যাত্রীদের নিকট থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া প্রদান করে দিনভর বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় বসে সময় কাটালেও বাস মিলছে না তাদের কপালে।
বগুড়া থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত সরকারি নির্ধারিত ৩৮০টাকা মূল্যের প্রতিটি বাস টিকিটের দাম ঈদ উপলক্ষে আদায় করা হচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ টাকা হারে। উচ্চ মূল্যে টিকিট কিনেও দিনভর রাস্তার পাশে এখানে-সেখানে অসহায় অবস্থায় সময় কাটাতে হচ্ছে ঈদ ফেরত কর্মমূখী সাধারণ যাত্রীদেরকে।
প্রতিদিনের জন্য বরাদ্দকৃত ৫শ থেকে ৮শ টিকিট শেরপুরে উপস্থিত যাত্রীদের কাছ থেকে সরকারি ভাড়া ৩৮০টাকার স্থলে ৭শ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে।
এছাড়াও কোন কোন মিনিবাসে অসহায় গার্মেন্ট কর্মীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক আদায় করতে দেখা গেছে জন প্রতি ৬শ টাকা হারে টিকেটের মূল্য। আবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় চলাচলকৃত লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাস-মিনিবাসের ঢাকাগামী বুকিং ভাড়া আদায় করা হচ্ছে জনপ্রতি সাড়ে ৭শ টাকা থেকে ৮শ টাকা।
শেরপুর উপজেলা কোচ কাউন্টার মালিক সমিতির সভাপতি মো. সাইদুর রহমান তারা বলেন, একমূখী যাত্রী হওয়ার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া এত যাত্রী ঢাকায় পাঠানো সম্ভব নয়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেরপুর বিজনেস কারিগরী কলেজের শিক্ষক এবং একতা কোচ কাউন্টারের টিকিট মাস্টার সেলিম রেজা জানায়, আমার নামে প্রতিদিন ২শ ২০টি টিকিট বরাদ্দ আছে। প্রতিটি টিকিটের দাম ৪৫০টাকা থেকে কিছুটা বেশি নেয়া হচ্ছে।
সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগের সত্যতায় বগুড়া থেকে ঢাকাগামী নামী-দামী পরিবহনের মাঝে যেমন-নাবিল পরিবহন, ডিপজল পরিবহন, একতা পরিবহন, এসআর ট্রাভেলস্ ও শ্যামলী পরিবহন সহ হাতে গোনা ৮-১০টি পরিবহন কোম্পানী তাদের প্রতি টিকিটের ওপরে ২শ থেকে ৩শ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে ঈদ বোনাসের নামে।
ফলে এয়ারকন্ডিশনার হাইচয়েচ অত্যাধুনিক মানের এসি কোচের বগুড়া এবং নওগাঁ থেকে ঢাকাগামী প্রতিটি টিকিটের মূল্য ১ হাজার টাকা থেকে ১হাজার ৫শ টাকা হারে আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে শেরপুর, ধুনট, বগুড়ার বিভিন্ন রাস্তায় চলাচলকৃত ফিটনেসবিহীন মিনিবাসগুলো শেরপুর পৌর শহরের ধুনট মোড় এলাকা থেকে বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের শেরপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম নুরুর নেতৃত্বে প্রতিদিন ২০-২৫টি মিনিবাসের ভেতরে কাঠের টুল আর পাতলা মোড়া বসিয়ে জনপ্রতি ৫শ থেকে ৬শ টাকা হারে ভাড়া নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। এছাড়াও শেরপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি গাড়ি থেকে মালিক সমিতির নামে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা নেয়া হচ্ছে।
ফজলুল হক নামের যাত্রী জানায়, তিনি ময়মনসিংহ যাবার জন্য ঢাকার টিকিট কাটেন একতা পরিবহন শেরপুর কাউন্টার থেকে এবং উপজেলার চান্দাইকোনা বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়িতে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু চান্দাইকোনা থেকে গাড়িতে ওঠার সময় দেখে ওই সিট অন্য যাত্রীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি সিটের কথা বললে গাড়ির ড্রাইভার ও সুপারভাইজার আমার সাথে খারাপ আচরণ করে গাড়ি থেকে নেমে দিয়ে চলে যায়। অন্যান্য যাত্রীরা জানায়, মিনিবাসগুলোতে প্রচন্ড কষ্টে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে পেটের দায়ে গার্মেন্টে চাকরির জন্য। বাস শ্রমিকরা জানায়, মিনিবাসগুলোতে ভেতরে আর ছাদের উপরে মিলে ৬০থেকে ৮০জন নারী-পুরুষ যাত্রী টঙ্গি, গাজিপুর, চন্দ্রা, সাভার, বাইপাইল, আশুলিয়া ও মহাখালীর উদেশ্যে যাচ্ছে।
অপরদিকে গত ঈদের ৪দিন আগে ৯ সেপ্টেন্বর থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও বগুড়া জেলার সকল রাস্তায় চলাচলকৃত মিনিবাস, সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় নির্ধারিত ২০টাকার ভাড়া, কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই ৪০-৫০টাকা নেওয়া হলেও দেখার কেউ নেই।
শেরপুর-ধুনটের আন্ত:জেলা সড়কে চলাচলকারী নন্বর বিহীন সিএনজি চালিত অটোরিক্সাগুলো মাত্র ১৩কিলোমিটার রাস্তায় ২০টাকা ভাড়া বাড়িয়ে ৪০থেকে ৫০টাকা আদায় করছে। এ রাস্তায় একটুখানি রাত হলেই ভাড়া বাড়ে চক্রবৃদ্ধি হারে। শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম সরোয়ার জাহান জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার কোন বিধান নাই। আমি সরকারি কাজে বগুড়ায় আছি। যদি কোন বাস কাউন্টার এধরণের কাজে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।