মিয়ানমারের পথে পথে সাঁজোয়া যান, সেনা মোতায়েনেও তীব্র হচ্ছে বিক্ষোভ

মিয়ানমারের বেশ কিছু শহরের রাস্তায় সামরিক বাহিনীর অস্ত্রসজ্জিত গাড়িবহর টহল দিচ্ছে। রবিবার রাত ১টা থেকে প্রায় সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একে জান্তা শাসন বিরোধী বিক্ষোভকারীদের দমন অভিযানের প্রস্তুতির আভাস হিসেবে উল্লেখ করেছে।

সেনা অভ্যুত্থানের পর টানা নবম দিনের মতো দেশটিতে চলা বিক্ষোভে উত্তরাঞ্চলীয় কাচির রাজ্যে গতকাল রবিবার বিক্ষোভকারীদের ‍উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে সেগুলো রাবার বুলেট নাকি তাজা গুলি, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একইদিন কাচিনের মিতকায়িনা শহর থেকে ৫ সাংবাদিকসহ বহু লোককে আটক করা হয়েছে।

দেশটির টেলিকম অপারেটর কোম্পানিগুলো জানিয়েছে, তাদের রবিবার রাত ১টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা ও দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় রাস্তায় সেনা মোতায়েনের পরও নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে ইয়াঙ্গুনের উত্তরাঞ্চলে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিষয়ে অধ্যয়নরত হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভে সামিল হয়েছে।

রাজধানী নেপিদোর একজন চিকিৎসক বিবিসিকে বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন রাতে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। রাত ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত যে কারফিউ জারি করা হয়েছে, এ সময়টা নিয়ে তিনি ভীষণ ভয়ে আছেন। কারণ এই সময়েই পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন তাদের মতো লোকদের আটক করে নিয়ে যাচ্ছে।

ইয়াঙ্গুনের মার্কিন দূতাবাসের কর্মীদের কারফিউ চলাকালে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বহু দেশ। জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

বৈধ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে রাস্তায় নামা জনসাধারণের ওপর চড়াও না হতে জান্তা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।

সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে নেয়া মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশটির ২৩ হাজারেরও বেশি কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ছুটির দিনে রাষ্ট্রায়ত্ব গণমাধ্যমে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘শান্তি, উন্নয়ন ও শৃঙ্খলাসহ মিয়ানমার যখন একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করছে তখন বন্দিদের নির্দিষ্টভাবে ভদ্র নাগরিক হিসেবে পরিণত করতে, জনগণকে সন্তুষ্ট করতে এবং মানবিক ও সহানুভূতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে বন্দিদের সাধারণ ক্ষমা দেয়া হলো।’

গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশটির সামরিক বাহিনী। আটক করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’সহ মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও শাসক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে। দেশটিতে এক বছরের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দার ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।

গেল নভেম্বরে দেশটিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। সুষ্ঠু ভোটের মধ্য দিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা যথারীতি হস্তান্তর করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান মিং অং হ্লাইং।

তবে গোটা দেশে জান্তা সরকার বিরোধী বিক্ষোভে নেমেছে জনগণ।

Comments (০)
Add Comment