অভিযান চালিয়েও থামানো যাচ্ছে না মাদকের চালান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: সীমান্তে বিজিবির কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও মাদক কারবারি ও ব্যবসায়ীরা থেমে নেই মাদক পাচারের কাজে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের সিন্ডিকেট নিয়মিত নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সীমান্ত ঘেঁষে বিস্তীর্ণ, প্রতিদিনই ভারত থেকে এসব মাদকদ্রব্য অবৈধ ও চোরাই পথে সীমান্ত দিয়ে দেশে পাচার হয়ে আসছে। অত্র এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তির সিন্ডিকেটে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা৷ তাদের সিন্ডিকেট বেশ শক্তিশালী।
মাদকের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শিবগঞ্জ উপজেলার মনকষা, খাসের হাট, তেলকুপি, আজমতপুর,জমিনপুর,কালিগঞ্জ, ছোট/বড় টাপ্পু, সোনা মসজিদ, তত্তিপুর ঘাট, চেয়ারম্যান মোড়, শেখটোলা, তালপট্টি রহনপুর, ভোলাহাটসহ  বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ মাদকের চলছে রমরমা ব্যবসা।
তবে অতীতে যে ভাবে মাদকদ্রব্যগুলো  সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশের মধ্যে আসতো এখন তা অনেকটা কমে গেছে। যার ফলে মাদকদ্রব্য গুলো খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বেশ চওড়া দামে। একেকটি মাদকের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। তারপরও মাদকের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমান বাজারে একটি ফেনসিডিল বোতলের দাম ১,৫০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা। দাম বেড়েছে ইয়াবা, হেরোইন, মদ,প্যাথেডিন ইনজেকশন, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকের।
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতিবেদক এর কাছে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিদিন দুপুর ২ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকের রমরমা ব্যবসা। বিভিন্ন বয়সের মাদকসেবিরা একসাথে হোন্ডা ও প্রাইভেট গাড়িতে করে এসে মাদক সেবন করছেন বিভিন্ন স্পটে। দৈনিক রাজশাহী প্রতিদিন পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে মাদক বিক্রেতাদের কাছ থেকে মাদক ক্রয় করেও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
টাকা থাকলে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে যে কোন মাদক। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা যেভাবে মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে, বিষয়টি অতন্ত্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে উদ্ধার করতে না পারলে।  দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে, সেই সাথে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ মাদকের ছোবলে নষ্ট হয়ে যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারির পরেও থেমে নেই মাদকের রমরমা ব্যবসা। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে অনেক মাদক ব্যবসায়ী মাদকসহ ধরা পড়ার পরেও জামিনে বের হয়ে আবারো মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিত্যনতুন মাদক ব্যবসায়ী দিনদিন গড়ে উঠছে।
আগের তুলনায় মাদক ব্যবসা আরো সহজ হয়ে গেছে, আগে মাদক সেবন করতে গেলে নির্দৃষ্ট স্পটে যেতে হতো। কিন্তু বর্তমানে মাদকের লেনদেন কোথায় হবে তা মাদকসেবী ও মাদক বিক্রেতা মোবাইলের মাধ্যমে ঠিক করে নিচ্ছেন৷ যার কারণে মাদকের স্পটগুলো এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই।
প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গার অনেক মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবি প্রশাসনের হাতে মাদকসহ গ্রেপ্তার হচ্ছেন।  তারপরেও কোনভাবেই থামছে না মাদকের রমরমা ব্যবসা।
অভিযোগ রয়েছে, অল্প বয়সের ছেলে-মেয়েদের দিয়ে মাদক বিক্রির কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। প্রতিবেদক, এই বিষয়ে তদন্ত করে এর প্রমাণও পেয়েছেন। একাধিক মাদক স্পটে শিশুদের দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকদ্রব্য খোরদের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
সীমান্তবর্তী এলাকার একাধিক ব্যক্তিবর্গ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ভারত সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় এলাকার বিভিন্ন জায়গার বেশ কিছু সংখ্যা দুষ্কৃতিকারী কতিপয় অসাধু ব্যক্তি বছরের পর বছর ধরে এলাকায় বসবাস করছে। মূলত তারাই দিনের পর দিন যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। প্রতিনিয়ত প্রত্যেকদিনই জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটরসাইকেল যোগে মাদকসেবীরা মাদকসেবনের জন্য আসে। মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের বিরক্তে অতিষ্ঠ থাকে এলাকার সচেতন ব্যক্তিবর্গ।
মাদক সেবনের পর মাদক সেবীরা রাস্তা দিয়ে যাবার সময় এলাকার উঠতি বয়সী মেয়েদের প্রায় ইভটিজিং করে। ভয়ে তারা প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।  শুধু মাদকের নিরাপদ ঘাঁটি নয়, এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ সহ বিভিন্ন অপরাধও সংঘঠিত হয়। মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী ও অপরাধীদের কাছে এইসব এলাকা নিরাপদ জায়গা । এখানকার মাদকের আখড়া সবার কাছে ওপেন সিক্রেট।
স্থানীয়রা জানান, তাদের এলাকায় দির্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রকার মাদকের বেচা-কেনা হয়ে আসছে। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে অনেকেই আজ সংসার এবং সমাজ ছাড়া হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরবর্তী অংশ দ্বিতীয় পর্বে