তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে সেভাবেই চিন্তা করতে হবে, এদেশ যেন আবার সেই খুনিদের রাজত্ব না হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে, গণতন্ত্রের এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে।’
রবিবার ( ৩ নভেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জেল হত্যা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর ওই বছর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের নাম পুরোপুরি মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিলো। ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে পাকিস্তানের আরেকটি প্রদেশ হিসেবে ফিরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত হয়।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে চলায় জাতীয় চার নেতাকেও হত্যা করা হয়। তাদের হত্যার মধ্যদিয়ে চক্রান্তকারী গোষ্ঠী চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের নামটি বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে।’
এসময় তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে দুই হত্যাকাণ্ডে মদদ দেয়া ও খুনিদের প্রতিষ্ঠিত করার অভিযোগ করেন। সেই সঙ্গে দলটির বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষায়ে অভিযুক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে শাহ আজিজ পাকিস্তানের দূত হয়ে জাতিসংঘে গিয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, সেই আজিজকেই জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে প্রধানমন্ত্রী বানালো! বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে যারা হত্যা করেছে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জিয়া তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলো। শুধু তাই নয়, ওই খুনিদের বিভিন্ন দেশে আমাদের দূতাবাসগুলোতে রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে বিভিন্ন পদে চাকরি দিয়েছিলো। কিন্তু, তখনই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে জিয়ার এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছিলো। পোল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ এই হত্যাকারীদের পাঠালেও গ্রহণ করেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আর আমার ছোট বোন রেহেনা দেশের বাইরে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভানেত্রী নির্বাচিত করে। আমার স্বপ্ন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, বঙ্গবন্ধু স্বপ্নকে পূরণ করা। জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার কাজ শুরু করেছিলেন, সেই বিচার কাজ শেষ করা।’
আওয়ামী লীগের পথচলা কখনই সহজ ছিলো না বলেও এসময় মন্তব্য করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, ‘আমাদের পথ চলা কখনই সহজ ছিল না। ঘরে বাইরে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছি। বারবার আঘাত এসেছে, আমি জানি একটি লক্ষ্য যদি স্থির থাকে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে সততার সঙ্গে অগ্রসর হওয়া যায়; অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় সেজন্যই শত বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে গেছি।’
‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী এই সংগ্রাম করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে। এতো বাধার মুখেও আমরা সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। তার ফলেই জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছি।’
৯৬ সালে সরকারে আসাতেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং জাতীয় ৪ নেতার হত্যার বিচার করা সম্ভব হয়েছে বলে স্মরণ সভায় মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার গঠন করেই আমরা ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করেছিলাম। আমরা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করেছি এবং ৪ জাতীয় নেতার বিচার শুরু করতে পেরেছিলাম। বিচার যখন আমরা করতে পারলাম তখন বাংলাদেশ অভিশাপমুক্ত হলো।’