ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের

ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। যার ফলে প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে সেই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান ভারতের দুই ব্যাটার স্মৃতি মান্ধনা ও হারলিন দোয়েল। তাদের জুটিতে সহজ জয়ের পথেই ছিল সফরকারীরা।

তবে ম্যাচের শেষ দিকে ভারতের সিরিজ জয়ের স্বপ্নভঙ্গে বাধা হয়ে দাঁড়ান টাইগ্রেসদের স্পিনার নাহিদা। সফরকারীদের ইনিংসের ৪৮তম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে খেলা আরও জমিয়ে দেন এই স্পিনার। তবে শেষ পর্যন্ত ইতিহাস গড়া হয়নি বাঘিনীদের। নাটকীয় ম্যাচটি টাই হয়ে গেছে। এতে ১-১ এ সমতাতেই শেষ হয়েছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।

শনিবার (২২ জুলাই) মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ফারজানার ইতিহাস গড়া সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান সংগ্রহ করেছিল বাংলাদেশ। যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ও ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৪৯ ওভার ৩ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৩ রানে গুটিয়ে যায় ভারতীয়রা।

টাইগ্রেসদের রেকর্ডগড়া সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে ভারত। মারুফার ভেলকিতে ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে সাজঘরে ফিরেন ভারতীয় ওপেনার শেফালি। এরপর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ইস্তিকা ভাটিয়াও ফিরলে দুই উইকেট হারিয়ে একপ্রকার চাপেই পড়ে সফরকারীরা। তবে সেই ধাক্কা সালাম দিয়ে দলের হাল ধরেন স্মৃতি মান্ধানা ও হারলিন।

তৃতীয় উইকেটে ১৪২ বলে ১০৭ রানে জুটি গড়েন স্মৃতি ও হারলিন। দুজনেই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে ব্যক্তিগত ৫৯ রানে লেগ-স্পিনার ফাহিমা খাতুনের বলে ক্যাচ দিয়ে স্মৃতির বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।

এরপর অধিনায়ক হারমানপ্রিত ও হারলিন মিলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই ফিরেন ভারতীয় অধিনায়ক। তাকে কাবু করেন নাহিদা। এ সময় নাহিদার জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যাট দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলেন হারমানপ্রিত।

এরপর বৃষ্টির কারণে ম্যাচ কিছু সময় বন্ধ ছিল। বৃষ্টি বাগড়া শেষে ম্যাচ শুরুর পর ৪২তম ওভারে ধাক্কা খায় ভারত। সফট হ্যান্ডে বল ঠেলে জায়গা বদল করতে গিয়ে রান-আউটের ফাঁদে পড়েন হারলিন। ৯ বাউন্ডারিতে ৭৭ রানে ফিরেন তিনি। এরপর দীপ্তি শর্মাকেও রান-আউটের ফাঁদে ফেলে ম্যাচের রোমাঞ্চ বাড়িয়ে দেয় টাইগ্রেসরা। তবে শেষ চার ওভারের অতি নাটকীয়তায় ম্যাচ থামে সমতায়।

শেষ দিকে ১৯ বলে মাত্র ১০ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের, হাতে তখনো ৪ উইকেট। জয়টা তাদের নিশ্চিতই ছিল। এরপর কয়েক মিনিটে বদলে যায় পুরো দৃশ্যপট। ১৫ বলের মধ্যে ভারতের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ টাই করে ফেলে বাংলাদেশ।

এর আগে, ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ ধীরগতিতেই করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার শামিমা সুলতানা ও ফারজানা হক। দেখেশুনে ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে বড় করতে থাকেন দলীয় সংগ্রহ। তবে ব্যক্তিগত অর্ধশতকের ইনিংস খেলে ৫২ রানে শামিমার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ভাঙে ওপেনিং জুটি। ওয়ান ডাউনে নেমে ৩৬ বলে ২৪ রান করেন নিগার। ঋতু মণির ব্যাট থেকে আসে ২ রান।

তবে উইকেট আগলে ধরে দেখেশুনে ব্যাট চালাতে থাকেন ফারজানা। দায়িত্বশীল ও ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এখন পর্যন্ত তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান নারী ক্রিকেটার। ১৫৬ বলে ৭ চারে সেঞ্চুরির কোটা পূরণ করা ফারজানা। তার ঐতিহাসিক সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেটের খরচায় স্কোরবোর্ডে ২২৩ রান তুলে স্বাগতিকরা।

Comments (০)
Add Comment