যানাজায়, গত শুক্রবার (৮মার্চ) ট্রাক্টর ও ভটভটির ধাক্কায় আবু সাইদ (৫৫) নামের এক বৃদ্ধ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ছাড়াও গত দুই বছরে নুরজাহান (৪০) আমির হোসেন (৬০), মুগল হোসেন (৪৮), ওয়াসিমা খাতুন (৬০), সোবহান (৬৫). জাহিদুল ইসলাম (২৬), মতিয়ার রহমান (৪০) সহ অনন্ত ২০ জনের মৃত্যু ও আহত হয় স্কুল শিক্ষার্থীসহ প্রয় ৩০ জন।
সম্প্রতি উপজেলার চান্দারচর, চর বামনেরচর, টাপুরচর, মিয়ারচর, গেয়ালগ্রাম,দিগলাপাড়া,খন্জনমারাসহ কয়েকটি সড়ক মেরামতের কাজ সম্পূর্ণ করা হলেও অতিরিক্ত মাটি ভর্তি ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ী)। চলাচলের কারণে সড়কটিতে আবারো খানাখন্দ দেখা দিয়েছে। ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ী)’র আঘাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না গ্রামীণ পাকা সড়ক ও কাচা পথগুলো। উপজেলা বাসট্যান্ড, থানা মোড়, ডিগ্রী কলেজ মোড়, উপজেলা মোড় ও ভোলার মোড়ে প্রশাসনের চোখের সামনের এ সড়কসহ বিভিন্ন শাখা সড়কে পিছু ছাড়ছে না যানজট। এতে ঘটছে ছোট খাটো দুর্ঘটনা।
অবৈধ গাড়ীর সামনে মাসিক চাঁদার নামে মানতি কার্ড ব্যবহার করে পুরো উপজেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ অবৈধ যানবাহন গুলো। আর একারণে নিরব ভূমিকা পালন করেন উপজেলা প্রশাসন। পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এমনকি অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানের ছোঁয়া ট্রাক্টর চালক-মালিকদের কাছে পৌঁছায় না। উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে শুধু মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রেও পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে মোটরসাইকেল চালকদের হয়রানি করার অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ী)’র চালক বলেন, রৌমারী থানা পুলিশ প্রায় প্রতিদিনই তল্লাশির নামে চেকপোস্ট বসিয়ে বৈধ কাগজপত্র না থাকা যানবাহনের বিরুদ্ধে নাম মাত্র আইনগত ব্যবস্থা নিলেও বৈধ যানবাহন চালক ও পথচারিদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজকরে।
বেশি লাভের আশায় ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ী) মালিকরা স্বল্প বেতনে অপ্রাপ্ত বয়সের চালককে দিয়ে ট্রাক্টর চালানোর কারণে সড়কে চলাচলরত স্কুল ছাত্র,ছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ী)’র চাপায় পড়ে আহত ও নিহত হচ্ছে। ভ্যানচালক হেলপাররাই এখন ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ী) মালিকদের ভরসা। যে চালক যত বেশি গতিতে গাড়ি চালিয়ে ইটভাটায় ও জায়গা ভরাটে যত বেশি মাটি পৌঁছে দিতে পারবে, সেই চালককে মালিকরা তত বেশি পছন্দ করেন। পাল্লাদিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে বিকট শব্দ দূষণ হয়। এতে শিশু,বৃদ্ধ্য ও পথচারীদের সড়কে হাঁটাচলা করতে মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়।
এছাড়া অতিরিক্ত মাটি বহন করার কারণে সড়কে চলার পথে ঝাঁকুনি খেয়ে মাটি পড়ে যায় এবং একটু বৃষ্টি হলেই পাকা সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও এ উপজেলায় অবাধে চলছে পাওয়ার টিলার দিয়ে তৈরি অবৈধ ট্রলি (ভটভটি)। এগুলোও অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের দিয়ে মূল সড়কে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এই ধরনের গাড়ি উপজেলার বিভিন্ন স-মিলের জন্য গাছের গুঁড়ি, কাঠ-খড়ি ও গরু-মহিষসহ নানা প্রাণী বহন করে।
জানা গেছে চার বছর ধরে রৌমারী উপজেলায় ফসলি জমির শ্রেণী পরিবর্তন না করে ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে জমির মালিকদের লোভদেখিয়ে ফাঁদে ফেলে মাটি, ইট ও পুকুর খনন ব্যবসায়ীরা এ পর্যন্ত প্রায় ৬’শ একর ফসলি জমি পুকুরে পরিণত করেছেন বালু খেকোরা।
উপজেলার ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ী) মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, মালিক সমিতির আওতায় দেড় শতাধিক ট্রাক্টর আছে। এ ছাড়াও বাইরের এলাকা থেকে ৫০টির মতো ট্রাক্টর এসে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, নতুন সড়ক আইন কার্যকর করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তারা বৈঠক করেছেন। চালক ও মালিক পক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রকৃত চালক ছাড়া কেউ যেন ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ী) না চালায়। সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য প:প:কর্মকর্তা ডা. মো আসাদুজ্জামান বলেন, বালু বোঝাই ট্রাক্টর (কাকড়া গাড়ী) অবাধে চলাচলের কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং স্কুল শিক্ষার্থী ও বয়স্ক মানুষ সহ এজমা, সর্দি,কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব অবৈধ যানবাহন বন্ধের জন্য উপজেলা প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করছি।
রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লা হীল জামান জানান, ট্রাক্টরগুলো অবাধ চলাচলের কারণে সদরে এক দিকে যেমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং অন্য দিকে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। শিগগিরই এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভূমি নাহিদ হাসান খান বলেন, রৌমারীতে অসংখ্য ট্রাক্টর অবাধে চলছে। এসব বন্ধের জন্য আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে টাকার বিষয়ে প্রশ্নকরলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।