কোম্পানীতে হস্তান্তরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-গণছুটি, বগুড়ার প্রতিটি পিডিবি’র অফিসে তালা ॥ চরম ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

দীপক সরকার: রাজশাহী জোনের আওতাধীন বগুড়ার প্রতিটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) অফিসে গত মঙ্গলবার থেকে তালা ঝুলছে। পিডিবিকে কোম্পানিতে রুপান্তরের প্রতিবাদে গত আগস্ট থেকে ৩শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বিক্ষোভ, কালোব্যাজ ধারণ কর্মসুচীসহ পালন শেষে এক যোগে গণছুটিতে রয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ অফিসগুলোতে তালাবদ্ধ থাকায় হাজার হাজার গ্রাহক সেবা না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)-এর আওতাধীন রাজশাহী ও রংপুর জোনকে নর্থজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে রুপান্তরর প্রতিবাদে বিদ্যুৎ কর্মকর্তা/কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ডাকে কেন্দ্রীয় কর্মসুচী অনুযায়ী গত ১ আগস্ট  থেকে সারা উত্তরাঞ্চলের সকল কার্যালয় তালাবদ্ধ করে রেখেছে । টানা ৯ দিনে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সমাবেশ প্রাথমিকভাবে শেষ করে গত মঙ্গলবার থেকে ৩দিনের গণছুটিতে চলে যাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে পিডিবি। বিদ্যুতের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ও ইমারজেন্সি ম্যানদের ছাড়া কেউ অফিস করছে না। এতে হাজার হাজার গ্রাহক সেবা নিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা বিলসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অফিসে গেলেও প্রধান ফটক বন্ধ পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া প্রি-পেইড গ্রাহকরা কার্ড রিচার্জ করতে না পারায় অনেক গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
পিডিবি’র কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সরকার তাদের সঙ্গে কোন কথা না বলে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে এই  সেক্টরকে কোম্পানিতে রুপান্তর করায় তাদের অনেকের চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। অপর দিকে  যে সব কর্মকর্তা কর্মচারীর চাকরির বয়স ২০-২৫ বছর হয়েছে তাদের অবসরকালে টাকা পয়সার হিসাব নিকাশও সরকারিভাবে স্পস্ট করা হয়নি।
এদিকে পিডিবি কে কোম্পানীকরণ হলে  শুধুই কর্মকর্তা কর্মচারী নয় সাধারণ গ্রাহকরা  অনেক ক্ষতির শিকার হবে। পিডিবি যখনি কোম্পানির হাতে চলে যাবে তার পরের দিন থেকেই বিদ্যুতের দাম ইচ্ছে মত বাড়িয়ে দেবে। সরকারের কাছে বর্তমান মূল্যে কিনে অবশ্যই তার চেয়ে বেশি দামে গ্রাহকের কাছে ওই বিদ্যুত বিক্রি করবে কোম্পানি। এতে প্রত্যেক গ্রাহককে বিদ্যুতের খাতে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হবে প্রতি মাসে। এদিকে পিডিবি’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারনে প্রতিদিনই অনির্ধারিত লোড  শেডিং হচ্ছে। কখন কখন তা চরম আকার ধারন করছে। এছাড়াও কোথায় কোন কারণে বিদ্যুৎ এর সমস্যা হলে তা সহজে মেরামত করা হচ্ছে না। শহরে প্রায় প্রতি রাতেই বিদ্যুত চলে যাওয়ায় অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছে গোটা উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ গ্রাহক।
বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার শফিকুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার থেকে আমার বাসার প্রি- পেইড কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। রিচার্জ করতে এসে বিদ্যুৎ অফিসের মূল গেটে তালা দেখে বাধ্য হয়ে ফিরে গেছি। তার বাড়িতে এখন বিদ্যুতের বাতি জ্বলছে না।
গ্রাহকের সাথে আলাপচারিতায় বগুড়ার জহুরুল নগর এলাকার গ্রাহক পারভিন আক্তার, জলেশ্বরীতলার এডোনিস বাবু, শেরপুর এলাকার শেরুয়ার মিল চাতাল ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম, পালপাড়ার সাইফুল ইসলাম লিপু, উত্তরসাহাপাড়া’র সুধীন্দ্রনাথ রায় জানান, বিদ্যুতের দাম বছরে কয়েক বার দফায় দফায় বৃদ্ধি করেছে সরকার। আবার যদি কোম্পানিতে ছেড়ে দেয় তাহলে লাগমহীন ভাবে বৃদ্ধি পাবে বিদ্যুতের দাম। তবে সাধারণ মানুষের ক্রয় মতার মধ্যে বিদ্যুতের দাম রাখতে সরকারে কাছে দাবি জানান তারা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ শেরপুর অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ ফিরোজ কবির জানান, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সকল কার্যালয় লাভজনক। রাজস্ব আয়ের দিক  থেকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ অনেক অগ্রগামী। সরকার হঠাৎ করে এ বিভাগকে কোম্পানীতে রূপান্তরিত করায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ুব্ধ হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মধ্যে দিয়ে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দাবী আদায় না হলে বৃহত্তর কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে।
বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ বগুড়া-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, সরকার পিডিবিকে কোম্পানিতে রূপান্তর করবে ভালো কথা, কিন্তু আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সরকারী চাকুরীকালিন সুযোগ সুবিধা প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়া হোক। এদিকে কোম্পানিতে রূপান্তর করাতে সারাদেশের কর্তকর্তা কর্মচারীরা গণছুটিতে গিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তিনি আরো বলেন সরকার দ্রুত বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসে মিমাংসা করবে বলে আশা করছি।

রংপুর বিভাগরাজশাহী বিভাগসারাদেশ
Comments (০)
Add Comment