ক্যান্টিনটি কবে অপসারণ করা হবে ??

আবু ছাইদ, ডোমার-নীলফামারী : ক্যান্টিনটি থাকার কারণে কমলমতি ছোট ছোট শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ক্যান্টিনটি শ্রেণী কক্ষের সামনে হওয়ায় ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি করছে শ্রেণী কক্ষগুলোর।

শিক্ষক-অভিভাবক কমিটি (পিটিএ)-র সদস্য নির্বাচন ও উপবৃত্তির টাকা অনিয়মের অভিযোগ নিরসনের নিমিত্ত্বে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব অভিযোগ করেও ক্যান্টিনটি সরিয়ে ফেলা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে,পাশে থাকা স্কুল এন্ড কলেজ প্রধানের বিরুদ্ধে। গত ৭ সেপ্টেম্বর অভিভাবক সমাবেশে ক্যান্টিনটির অপ্রয়োজনীয়তা ও কমলমতি ছোট ছোট শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণ প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তপক্ষ ও কমিটির সদস্যবৃন্দ তুলে ধরলেও গাঁ দেননি স্কুল এন্ড কলেজ কর্তপক্ষ।

এবিষয়ে পিটিএ সদস্য চিলাহাটি প্রেসক্লাব সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, অত্র বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণও অনেক। কিন্তু পরিমাপ করে দেখা গেছে মাত্র ২৭শতাংশ জমি বিদ্যালয়টির আয়ত্বে। এছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য কোন জায়গা নেই। যে অতিরিক্ত জায়গাটুকু রয়েছে সেটাতে আবার ক্যান্টিন তৈরি করেছে। এমন কনজাষ্ট জায়গায় শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হবে। কোমলমতি শিশুরা বিনোদন মূখী না হলে শিক্ষায় মনযোগী হবে না।

অসমর্থিত একটি সূত্রে জানা যায়, চিলাহাটি গাল্স স্কুল এন্ড কলেজ’র অধ্যক্ষ আইয়ূব আলী ও চিলাহাটি মার্চেন্টস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শাহানাজ পারভীন স্বামী-স্ত্রী হওয়ায় যুক্তি করে ক্যান্টিনটি তৈরি করেছেন। সূত্রটি জানায়, অধ্যক্ষ তাঁর বিদ্যালয় ভবনের পাশেও করতে পারতেন।

এবিষয়ে চিলাহাটি গাল্স স্কুল এন্ড কলেজ’র অধ্যক্ষ আইয়ূব আলীর সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এপ্রসঙ্গে গত ২৪মার্চ’১৬ প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক শাহানাজ পারভীনের বিরুদ্ধে ও ক্যান্টিন অপসারণ প্রসঙ্গে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে তৎকালিন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মনসুর আলীকে আহ্বায়ক করে ৫সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হলেও প্রধান শিক্ষিকার অপসারণ হলেও ক্যান্টিনটি রয়ে গেছে। ডোমার উপজেলা বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাজাহান মন্ডলের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি ক্যান্টিনের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মূলত প্রশাসনের। উপজেলা নির্বাহী কর্মককর্তাকে জানিয়েছি, তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ক্যান্টিনটি খাস জমিতে। তবুও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয় তো। বিষয়টি দেখতে হবে।
উপবৃত্তি প্রদানে অনিয়মের অভিযোগে চিলাহাটি মার্চেন্টস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ এরশাদুল হক বলেন, আমি অত্র বিদ্যালয়ে যোগদান করেছি গত ৩১মার্চ’১৬ইং। এরপূর্বেই শিশুদের পরীক্ষার ফলাফল ও বই দেওয়া হয়ে গেছে। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আমাকে যেভাবে চার্জ বুঝিয়ে দিয়েছেন সেভাবেই আমি শিশুদের উপবৃত্তির তালিকা করেছি। এতে অজ্ঞাতসারে দু-চারটি অকৃতকার্য দরিদ্র শিশু উপবৃত্তির তালিকায় এসেছে এবং তারা উপবৃত্তির টাকা পেয়েছে। সরকার দরিদ্র শিশুসহ শতভাগ শিশুর শিক্ষার হার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে বিদ্যালয়ে টিফিনসহ শতভাগ উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার বিধান রেখেছেন।
এই প্রতিবেদকের একপ্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি মানছি, যে শিশুটি অকৃতকার্য হয় তাকে উপবৃত্তির টাকা প্রদান করা ঠিক নয়। টিফিন আর উপবৃত্তি পাওয়ার লোভেই দরিদ্র শিশুগুলো বিদ্যালয়ে আসে। টিফিন আর উপবৃত্তি না দিলে তো তারা বিদ্যালয়ে আসে না। এমনও দেখা গেছে বিদ্যালয়ে না এসে তারা হোটেলে কাজ করছে।
পিটিএ সদস্য মির্জা আলম বলেন, শতভাগ শিক্ষার হার বাস্তবায়নের প্রয়োজনে সেটাই করা উচিত। অকৃতকার্য হয় মূলত দরিদ্র শিশুরা। পেটে খাবার না থাকলে লেখাপড়ায় মন বসে না। তবে অকৃতকার্য হতে দেওয়া যাবে না। কেন শিশুটি ফেল করল তা খতিয়ে দেখা উচিত।
প্রসংগত, চিলাহাটি মার্চেন্টস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টির জমির দলিলাদি প্রত্যক্ষ করে জানা যায়, বিদ্যালয়টির জমির পরিমাণ ৭৮শতাংশ। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেন,তাদের দখলে শুধু মাত্র ২৭শতাংশ বিদ্যালয় ভবনসহ সামনে কিছু খোলা জায়গা ছাড়া নেই। বিদ্যালয়ের জমিটি ফিরে পেতে বিদ্যালয় কর্তপক্ষ উদ্ধর্ত্বন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Comments (০)
Add Comment