চলনবিল হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

আটঘরিয়া(পাবনা) প্রতিনিধি : প্রচলিত প্রবাদ বাক্যে আছে, ‘বিল দেখতে চলন-গ্রাম দেখতে কলম-আর শিব দেখতে তালম’। দেখার ও জানার এই তিনটি বিষয়ই চলনবিলে পাবেন পর্যটকরা।
সিরাজগঞ্জ’ পাবনা ও নাটোর এই তিন জেলার সংযোগস্থলে যে বিশাল নিম্ন জলাভূমি, এরই নাম চলনবিল। দেশের সবচেয়ে বড় এ জলাভূমি এককালে মাছ ও দেশি বিদেশি পাখির জন্য ছিল বিখ্যাত। এখন মুক্ত জলাশয়ের মাছ সংখ্যা কমে গেলেও তা একেবারেই ফুরিয়ে যায়নি।
যে বিশাল এলাকা নিয়ে এই বিলাঞ্চল তার মধ্যে রয়েছে সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, সলঙ্গা, উল্লাপাড়া ও তাড়াশ উপজেলা।
বর্ষায় এই বিলের কূল-কিনারাহীন ঢেউ ভ্রমন পিয়াসি মানুষকে মুগ্ধ করে। চলনবিলের মধ্যে দিয়ে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে বর্ষা মৌসুমের প্রায় প্রতিদিন দেশি বিদেশি পর্যটক চলনবিলের মুগ্ধতা অনুভব করে।
অনেকেই মনে করেন, এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে তা কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন বা কুয়াকাটার চেয়ে কোনো অংশে কম দর্শনীয় হবে না।
এক সময় এই বিলাঞ্চলে কোন মানুষের বসবাস ছিল না। কালক্রমে নদী বাহিত পলিমাটির চর গড়ে ওঠে বিলের নানা জায়গায়। আর সেখানে দুর্দান্ত প্রকৃতির সাহসী মানুষ মাছ ও পাখির লোভে চলনবিলের মাঝে পুকুর বা দীঘি খনন করে তার পাড়ে গড়ে তোলে বসতি। সেখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে গ্রাম।
এখানকার বিশাল বিশাল দীঘির মধ্যে রয়েছে জয়সাগর দীঘি, উলিপুর দীঘি, তাড়াশের কুঞ্জবন, নওগাঁয় ভানুসিংহ দীঘি, বাজার দীঘি,, মথুরা দীঘি, ধানচালা দীঘি, দেবীপুরের ভটের দীঘি, মুনিয়া দীঘি, শীতলাই জমিদার বাড়ীর দীঘি, সগুনা দিঘী, সুলতানপুর দিঘী, ভায়াটের দীঘি, উনুখার দীঘিসহ বড় বড় আরো অগুনতি পুকুর রয়েছে।
এসব দিঘী এখন মৎস্য চাষের খামারে পরিণত হয়েছে। মাছ বিক্রি করার জন্য বিলের এক প্রান্তে বিশ্বরোড সংলগ্ন মহিষলুটি বাজারে গড়ে উঠেছে বিশাল মৎস্য আড়ৎ।
সকাল ৫টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ আড়তে পবা, কৈ, বাঁচা, চিতল, কাতল, বেলে, বৌ মাছ, বাঁশপাতা, শোল-গজার, রুই, মাগুর, টেংড়া, পুটি, আইড়, পাবদা বোয়াল, ফলুই, চিংড়ি, টাকি, বাইমসহ সুস্বাদু ও মনোমুগ্ধকর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।
বিলের আকাশে রাতের তারাগুলো মানুষকে প্রাণবন্ত করে। চলনবিলাঞ্চলের আরো দেখার মত নিদর্শন চাটমোহরের সাহী মসজিদ, হরিপুরে প্রমথ চৌধুরীর জন্মস্থান, জোনাইলে খ্রিস্টান গির্জা, শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ী, শাহ মুখদমের মাজার, তাড়াশের লাল মন্দির, বিনসাড়ায় বেহুলার কূপ, হান্ডিয়ালের জগন্নাথ মন্দির, তাড়াশের দক্ষিণে ষোড়শ শতাব্দিতে তৈরি নশরত শাহের আমলে পাথরের তৈরি মসজিদ, নওগাঁয় শাহ শরীফ জিন্দনী (রঃ)-র মাজার, পাশেই পশ্চিমে আরও একটি ভাঙ্গা মসজিদসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন।
এসব স্থাপত্য এতটাই কারুকার্যে তৈরি যা পর্যটককে মুগ্ধ না করে পারে না।