জামিন পাওয়া হলো না খালেদা জিয়ার, উন্নত চিকিৎসার নির্দেশ

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে জামিন না হলেও মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বেগম জিয়াকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার পরই বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা এক কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছেন, “খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আগুন জ্বালো এক সাথে”, “খালেদা জিয়া জেলে কেন, মুক্তি চাই দিতে হবে”।

এদিন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বেগম জিয়ার জামিন আবেদন বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। এর পর আদালত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করেন।

জামিন খারিজের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আমরা শকড (আশাহত) হয়েছি। সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই মেরে ফেলতে চায়। চিকিৎসাও তো হচ্ছে না। আমরা তো তাঁর জামিনের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। পেলাম না।’

বেগম জিয়ার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছে। সে (খালেদা জিয়া) পঙ্গু অবস্থায় আছে। তাঁর অ্যাডভান্স ট্রিপমেন্টের দরকার। দীর্ঘদিন যাবত তিনি অসুস্থ। ৭ বছরের সাজা, দেড় বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। তাঁর উন্নত চিকিৎসা দরকার। এ অব্স্থায় সুপ্রিম কোট তার জামিন বাতিল করবে এটা নজিরবিহীন ঘটনা। আমাদের দেশে কেন, প্রতিবেশী দেশের এমন নজির নাই।’

আদালতে উপস্থিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যথার্থ রায় হয়েছে। মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন। কাজেই এখানে কারও কোনও কিছু বলার আছে বলে আমি মনে করি না। আর বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে যে নির্দেশনা সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে সেটাও যথার্থ বলেই আমরা মনে করি।’ব্রেকিংনিউজ

খালেদা জিয়ার অন্যতম প্রধান আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন ধরে সরকারের প্রস্তুতি দেখছিলাম। ইতোমধ্যে এজলাসে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আমরা নানাভাবে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। রিপোর্ট আসলো, আদালতকে পড়ে শোনালাম। আদালতকে বলেছি, এরচেয়েও বড় মামলায় আদালত বেল দিয়ে থাকেন। আমরা ১০টা ডিশিসন আদালতকে শোনালাম। আদালত আমাদের কথা শুনলেন। আমরা বলেছিলাম, মানবিক কারণে বেগম জিয়ার বেল চাই। আদালত খারিজ করে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া এদেশের গণতন্ত্রের নেত্রী। তিনি রাজনৈতিকভাবে নিষ্পেষিত। সরকারের রোষানলে সর্বোচ্চ আদালত থেকেও তিনি বেল পেলেন না। মেডিকেল রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, তার শরীরের অবস্থা ভালো না। তার অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্ট দরকার। প্রপার ট্রিটমেন্ট নেই বলেই অ্যাডভানসড ট্রিটমেন্টের কথা বলা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রপার ট্রিটমেন্ট হলে ওবায়দুল কাদের কিংবা মাননীয় রাষ্ট্রপতি কেন বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন? সরকার চাচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রেখে তার জীবনকে সংটাপন্ন করতে।’

আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আজ দুপক্ষের ৩০ জন করে ৬০ জন আইনজীবী আপিল বিভাগের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ সদস্যের বেঞ্চে বেগম জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে ৫ ডিসেম্বর জামিন আদেশের দিন ধার্য করেন আদালত। সঙ্গে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

তবে ৫ ডিসেম্বর প্রতিবেদন প্রস্তুতে আরও সময় চেয়ে মেডিকেল বোর্ড আবেদন করলে সর্বোচ্চ আদালত ৭ দিন পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর জামিন আদেশের পরবর্তী দিন ধার্য করেন। কিন্তু আজ (১২ ডিসেম্বর) মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ ও দুপক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোট বেগম জিয়ার জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। ওই বছরের ১৮ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জামিন ও খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। পরে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বেগম জিয়ার জামিন আবেদন বাতিল করেন হাইকোর্ট।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়াও তাঁর তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডিব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানকে আসামি করা হয়।

Comments (০)
Add Comment