প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান রিজভীর

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম : ‘দেশে স্বস্তি, শান্তি, গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন, নাগরিক স্বাধীনতা ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ অত্যন্ত জরুরি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ‘আর সে কারণে আজ থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানচ্ছি।’
মঙ্গলবার (২৭ জুন) বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলনে, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে না। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যদি মনে করে থাকেন যে, শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তাহলে তারা মূর্খের স্বর্গেই বাস করছেন। তারা অলীক স্বপ্ন দেখছেন। শেখ হাসিনাকে জনগণ বিশ্বাস করে না, তাই শেখ হাসিনার অধীনে কোনও নির্বাচন হবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই অসময়ে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার হাওর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রামে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড়ধসে অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বাস্তভিটাহারা হয়েছেন অনেকে। ঈদের প্রাক্কালে রংপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে এবারের ঈদ দেশের মানুষের জন্য শোক ও কান্নায় পরিণত হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মিথ্যা দাবি করেছেন।’
রিজভী বলেন, ‘ঈদের প্রাক্কালে ঘরমুখি মানুষের যাতায়াতে সরকারি উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে এতো মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। ঈদে যানজটে ঘরমুখি মানুষের নাকাল অবস্থায় সরকারের কোনও সার্ভিসই ছিল না, তবে যোগাযোগমন্ত্রীর লিপসার্ভিসের কোনও কমতি ছিল না। পরিবহন ও যাতায়াতে তাই এবারের ঈদে মানুষের মন থেকে শান্তি, স্বস্তি উবে গিয়ে সেখানে ভীতি আর শংকার আসন গেড়ে বসেছে।’
খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ দিশেহারা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকার ভিজিএফ কার্ডে চাল দিতে পারেনি। ঢাকাসহ দেশব্যাপী চালের দাম অনেক বেশি। স্বল্প আয়ের মানুষের নিকট তা ছিল দুষ্প্রাপ্য। দেশে নীরবে নয় বরং প্রকাশ্যেই দুর্ভিক্ষের আগ্রাসন ধেয়ে আসছে। সুতরাং শান্তি কেবল ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মনে, দেশের সাধারণ মানুষের মন নিরানন্দ বেদনায় ভারাক্রান্ত। অনাহার-অর্ধাহারে বিপর্যস্ত।’
বাংলাদেশ আবার জেগে উঠেছে, হারানো মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে-ঈদের দিনে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কোনদিক দিয়ে যে জেগেছে তা জনগণ জানে না। জনগণ শুধু শাসকগোষ্ঠীকেই জেগে উঠতে দেখেছে, যা এদেশে কখনোই কেউ প্রত্যক্ষ করেনি। যেমন ক্ষমতাসীনদের জাগ্রত ব্যবস্থাপনায় কিভাবে শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা পকেটে চলে যায়, কিভাবে ব্যাংকগুলো শুন্য হয়ে যায়। ক্ষমতাসীনদের তদবিরে, রাজকোষের টাকা কিভাবে হাওয়ায় উড়ে যায়।’
বাংলাদেশ আলোর দিকে নয়, বরং অন্ধকারের দিকেই যাচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন,‘ বিএনপিই এদেশে সূচনা করেছিল জনশক্তি রপ্তানি। সেই জনশক্তি রপ্তানি এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। যেসব দেশ আমাদের জনশক্তি আমদানি করে সেই সকল দেশের সাথে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেনি। যাদের রেমিটেন্স আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। গত বছরের তুলনায় দেশের রেমিটেন্স এবার ১৭ শতাংশ কমে গেছে। গত বছরও তার আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ রেমিটেন্স কমেছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স যেভাবে কমে আসছে তাতে রেমিটেন্স শুন্যের কোঠায় পৌঁছাতে আর বেশি সময় লাগবে না।’
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঈদের দিন বলেছেন-যে বাংলাদেশের হারানো মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ঠিকই বলেছেন, কারণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের হারানো মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমবারের বাকশালে গুম, খুন আর বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ যে মর্যাদা অর্জন করেছিল সেটি বর্তমান দ্বিতীয়বারের বাকশালে পূর্ণমাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গুম, খুন, বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা জাতির ভাগ্যললাটে এঁটে দেয়া হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের রাতের ঘুম, দিনের চলাচল বিষাদ ঘনঘোরের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশকে করা হয়েছে ছায়ান্ধকার, নিস্তরঙ্গ, নিশ্চল ও আতঙ্কময়।’
বাংলাদেশকে একটি ‘ক্রিমিনাল স্টেটে’ পরিণত করা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘সরকারের কৃপাধন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয়া হয়েছে হত্যার লাইসেন্স। বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিরা নয়, পুলিশই এখন জনগণের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য অসাড় ও মূল্যহীন। মিথ্যা চিৎকারসর্বস্ব দল আওয়ামী লীগ। সকল প্রকার অনাচারে লিপ্ত থেকেও তারা সেটিকে আড়াল করার জন্য মিথ্যা কোরাশ গাইতে থাকেন। তাই ক্ষমতাসীনদের টপ টু বটম নেতারা সরকারি অন্যায়কে আড়াল করতে চায় একই মিথ্যা বারবার আউড়িয়ে।’ব্রেকিংনিউজ

Comments (০)
Add Comment