মামলায় গ্রেফতার তিন জন হলেন শাজাহানপুর উপজেলার লতিফপুর দক্ষিণপাড়ার হারুনুর রশিদ (৪০), বগুড়া সদর উপজেলার জিগাতলার আমিনুর রহমান (৪৫) ও ইসলামপুর হরিগাড়ীর আব্দুল হান্নান (৪৫)। এরা সবাই শাহ সুলতান কলেজের অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত।
এ মামলায় অপর এজাহার নামীয় আসামি শাজাহানপুরের ওমরদীঘি চন্দ্রহাটা গ্রামের কাওছার আলী (২৪)। এছাড়া আরও ৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে মামলায়। কাওছার শাহ সুলতান কলেজের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি নিজেকে কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী ও অফিস স্টাফ পরিচয় দিতেন।
এজাহার সূত্র আরও জানায়, ১ নম্বর আসামি হারুনের সহায়তায় অন্য আসামিরা রাশাদুল ইসলামের কাছ থেকে এইচএসসিতে ভর্তির কথা বলে ৫০ হাজার টাকা ও মার্কশিট নিয়েছিলেন। একইভাবে হাবিবা আক্তার ও সাব্বির হোসেনের কাছে ২০ হাজার এবং মিলনের কাছে ১৮ হাজার টাকা নেন। এ ছাড়া তাদের মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন, প্রশংসাপত্র নিয়ে রাখে হারুন।
এই টাকা নেয়ার পর ভুক্তভোগীদের রোল নম্বর দেয়া হয়। সেই সুবাদে ওই শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষাগুলো দিয়েছেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন প্রত্যেকের কাছে ৫ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন অভিযুক্তরা। কিন্তু পরীক্ষার প্রবেশপত্র তারা দিতে পারেননি। প্রবেশপত্র চাইলে বিভিন্ন অজুহাত দেখানো হতো ওই শিক্ষার্থীদের।
পরবর্তীতে গত ১৬ আগস্ট এইচএসসি পরীক্ষার দিনে শিক্ষার্থীরা কলেজে গিয়ে হারুন ও অন্যদের কাছে গিয়ে প্রবেশপত্রের জন্য চাপ দেয়। তখন কলেজের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে তাদেরকে দেয়া রোল নম্বরগুলো ভুয়া। কাগজে তাদের ভর্তির কোনো নথি নেই।
ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচারের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। তারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পাশাপাশি রাজশাহী বোর্ড থেকে চার সদস্যের একটি টিম শনিবার(১৯ আগস্ট) কলেজে আসে তদন্তের জন্য। তদন্তকালের এক পর্যায়ে বিকেলে আমিনুর রহমান ও হারুনকে র্যাব আটক করে নিয়ে যায়। আর আব্দুল হান্নানকে আটক করে শাজাহানপুর থানা পুলিশ। পরে রাতে মামলা হলে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।
শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, গতকাল(১৯ আগস্ট) রাতে মামলাটি হয়েছে। মামলায় গ্রেফতার তিন আসামিকে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। আর কাওছার নামে একজন পলাতক রয়েছেন। তবে তাকেও গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শন শেষে সচিব অধ্যাপক হুমায়ুন কবির বলেন, এই ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেন (কলেজ বা শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত) তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে তিনিসহ ৪ জন ঘটনা খতিয়ে দেখছেন। আগামী ২১ আগস্টের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
বগুড়া সরকারী শাহ সুলতান কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর রেজাউন নবী বলেন, এ সংক্রান্ত বিষয়ে শাজাহানপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে এরসাথে আরও কেউ জড়িত কি-না সেটি তারা খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া কলেজ ও শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটিও বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।