গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় আরএমপি’র ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নগরীর ভেড়িপাড়া মোড়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ বর্ণাঢ্য র্যালি’র আয়োজন করে। র্যালিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
র্যালিটি ভেড়িপাড়া মোড় হতে শুরু হয়ে পুলিশ লাইনস্ এসে শেষ হয়। র্যালীর পূর্বে প্রধান অতিথি মহোদয় বেলুন ফেস্টুন ও কবুতর অবমুক্তকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এসময় সাথে ছিলেন আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার মো: আনিসুর রহমান।
পরবর্তীতে সকাল ১১ টায় রাজশাহী জেলা পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে আলোচনা সভা শুরু হয়। এসময় প্রধান অতিথি আরএমপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’র কেট কাটেন এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত স্বরণিকা ‘নবচেতনায় আরএমপি’-এর মোড়ক উম্মোচন করেন। এরপর আরএমপি’র উদ্যোগে তৈরিকৃত বিজ্ঞ আদালতে সাক্ষী হাজির ব্যবস্থাপনা ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সফটওয়ার-এর উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন শেষে আরএমপি’র ৩০ বছরের ইতিহাস ও সাফল্য নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার মো: আনিসুর রহমান। এসময় পুলিশ কমিশনার প্রধান অতিথি-সহ আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ মহোদয় রাজশাহীস্থ পুলিশ ইউনিটগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহীস্থ পুলিশের রয়েছে অসামান্য অবদান এবং বর্তমানেও তারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে পুলিশি দায়িত্ব পালন করে চলেছে। ঠিক একইভাবে সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবে।
পুলিশ কমিশনার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ । বাংলাদেশ আজ বিশ্বের নিকট উন্নয়নের রোল মডলে।
তিনি আরও বলেন, সাইবার অপরাধ সনাক্তকরণে আরএমপি-তে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব এবং মহানগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরীর সর্বত্র সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে, যা অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া হ্যালো আরএমপি অ্যাপস-এর মাধ্যমে মহানগরবাসী তাদের অভিযোগ যেনো পুলিশ কমিশনারের নিকট জানাতে পারেন, সে-ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে-কোনো ক্রাইসিস মোকাবিলায় সিআরটি টিম ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট দেখিয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।
এছাড়াও তিনি বলেন, মাদক নির্মুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত শূন্যসহিষ্ণুতার নীতির বাস্তবায়নে আরএমপি নিয়মিত ও বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। মাদক উদ্ধার-সহ যে-কোনো অপরাধ সনাক্তকরণে আরএমপি’র রয়েছে দৃশ্যমান সাফল্য। অপরাধ প্রতিরোধে গত ৫ বছরের ছিনতাইকারী, চোর, ডাকাত ও কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের নিবিড়ভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং-এর মাধ্যমে মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে জনগণ ও শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে বিভিন্ন রকমের জনসচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করছে আরএমপি। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ও জামিনে থাকা জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আমরা আরএমপি’র বিভিন্ন থানায় হাজিরার ব্যবস্থা করেছি, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী সারদা প্রিন্সিপ্যাল (অ্যাডিশনাল আইজিপি) মীর রেজাউল আলম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: গোলাম সাব্বির সাত্তার, সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আব্দুল খালেক, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো: আব্দুল বাতেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচায প্রফেসর ড. মো: হুমায়ুন কবির, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল-সহ আরএমপি, রাজশাহী রেঞ্জ-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, কমিউনিট পুলিশিং-এর সদস্য।
পরবর্তীতে বিকেল ৩টায় রাজশাহীস্থ সকল ইউনিটের পুলিশ অফিসারদের সাথে মতবিনিময় সভা ও সন্ধ্যা ৭ টায় আরএমপি পুলিশ লাইন্স মাঠে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।