বীরঙ্গনাদের ইতিহাস জানাতে নির্মিত  তথ্যচিত্র ‘আর কতবার বলবো’ এর প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন প্রজন্মকে বীরঙ্গনাদের ইতিহাস জানানোর লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে তথ্যচিত্র ‘আর কতবার বলবো’। ৪০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে রাজশাহীর ৮জন বীরঙ্গনার জীবনসহ ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও রাজশাহীর খন্ডচিত্রও উঠে এসেছে।

তথ্যচিত্রে বীরঙ্গনারা তাঁদের উপর দুঃসহ নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেছেন। জীবনের শেষ সময়ে এসে তাঁরা সকল বীরঙ্গনার যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন। তথ্যচিত্রটি প্রযোজনা করেছে নারীদের দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নারীপক্ষ’। নির্মাতা ‘নারীপক্ষ’ এর নির্বাহ সদস্য রেহানা সাদমানি।

শনিবার (২৫ মে) নগর ভবনের সিটি হলরুমে ‘আর কত বলবো’ তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীর আয়োজন করে নারীপক্ষ। প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্যচিত্রের নির্মাতা রেহানা সাদমানি, সমন্বয়ক নাজনীন সুলতানা রত্না, সংগঠনটির সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী শিরিন হক, নির্বাহী সদস্য সাদিয়া আজিম, রাজশাহীর সদস্য মাহমুদা বেগম গিনি, খোদেজা খাতুন, বীরঙ্গনা সফুরা বেওয়া ও শলো রাণী প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। বীরঙ্গনাদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে যারা মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে, যে সকল নারীরা নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের সকলের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ রাখতে হবে। কারণ তাদের কারণেই আমরা আজকের এই জায়গায় পৌছাতে পেরেছি।

তিনি আরো বলেন, ‘আর কত বলবো’ তথ্যচিত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরঙ্গনাদের নিয়ে রাজশাহীর চারঘাটের থানাপাড়া এলাকার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সারাদেশে এ রকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। পাক বাহিনীর নির্মম হামলার শিকার হয়েছেন অসংখ্য নারী। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে নারীপক্ষের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। নারীপক্ষের সঙ্গে আছি ও আগামীতেও থাকবো। নগরীতে বীরঙ্গনা স্মারক করার বিষয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন রাসিক মেয়র।

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, নতুন প্রজন্ম বীরাঙ্গনাদের সম্পর্কে জানে না। আমরা জানাতে ব্যর্থ হয়েছি। বীরাঙ্গনাদের সঠিক তালিকাও নেই। বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য নারীপক্ষ যে আন্দোলন করছে, বীরাঙ্গনাদের সম্মান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস জানাতে হবে।

আয়োজকরা জানান, নারীপক্ষ বীরাঙ্গনাদের জীবন প্রবাহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তাঁদের সম্মান, মর্যাদা এবং বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাঁদের জীবনাভিজ্ঞতা জাতীয় ইতিহাসের অংশ করা এবং নতুন প্রজন্মকে জানানো লক্ষ্যে ২০১১ সাল থেকে ‘৭১ এর যে নারীদের ভুলেছি’ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে।

এই কর্মসূচির সাথে যুক্ত অনেক বীরাঙ্গনা সরকারিভাবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং আরও বেশ কয়েকজন বীরাঙ্গনা গেজেটভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। যাঁরা এখনো গেজেটভুক্ত হন নাই তাঁদের মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন জেলার মোট ৫৩ জন বীরাঙ্গনাকে নারীপক্ষ ৮ হাজার টাকা করে মাসিক অর্থ সহায়তা প্রদান করছে।

এ পর্যন্ত ১০০ জন বীরাঙ্গনাকে অর্থ সহায়তা প্রদান এবং ২২ জনকে চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ৪ জন বীরাঙ্গনা বোনের ঘর মেরামত এবং ২৪ জন বীরাঙ্গনা বোনকে বন্যা, জলাবদ্ধতা ও কোভিডকালীণ দূর্যোগে খাদ্য সামগ্রী ও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

নারীপক্ষ ক্ষতিপূরণ ও প্রতিকার বিষয়ে উদ্যোগের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যেমন প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা শহরে বীরাঙ্গনা স্মারক নির্মাণের চেষ্টা। এছাড়া বীরাঙ্গনাদের প্রতি সম্মানজনক ভাষা ও শব্দ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ‘লড়াইটা ভাষারও’ বিষয়ক ভিডিও এনিমেশন, প্রচারপত্র ও পোষ্টার প্রকাশ করা হয়েছে যাতে যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতাকে ইজ্জতহানী বা সম্ভ্রমহানী বলার চর্চা ও প্রবনতা বন্ধ হয়।

বর্তমানে সন্ধান পাওয়া যতজন বীরাঙ্গনা বেঁচে আছেন তাঁদের সংক্ষিপ্ত জীবনী সংরক্ষনের কাজ চলছে যা পরবর্তী প্রজন্ম বা গবেষণার কাজে প্রামান্য দলিল হিসেবে কাজ করবে। তারই অংশ হিসেবে নারীপক্ষ আজ ‘আর কতবার বলবো’ শিরোনামে নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।

এই তথ্যচিত্রে রাজশাহীর ৮ জন বীরাঙ্গনার জীবন সহ ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও রাজশাহীর খন্ডচিত্রও উঠে এসেছে। এই তথ্যচিত্র নির্মাণের উপর যে জোরজবদন্তি ও হুনুম হয়েছে তা মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই প্রজন্মের কাছে বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগকে তুলে ধরে তাদের ভেতর দেশের জন্য দায়বদ্ধতা জাগ্রত করা।

Comments (০)
Add Comment