রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের অর্ধেক কাজ বাকি রেখে চুড়ান্ত প্রতিবেদন, দুদকে অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার:  রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন মূলক প্রকল্পের কাজ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কাজ শেষ না হতেই সম্পন্ন দেখিয়ে প্রতিবেদন দাখিল, কাজের ধীর গতি, কাজ শেষ না করেই ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠানকে বিল প্রদান, একের অধিকবার সময় বাড়িয়েও কাজ সম্পন্ন না হওয়া, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে প্রকল্প পরিচালক ও আরডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিকের দুর্নীতি বিষয়টিও এখন প্রকাশ্য রুপ নিয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খোদ দুর্নীতি দমন কমিশন পর্যন্ত গড়িয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর আরডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী নগরীর যানজট ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আরডিএ’র তত্ত্বধায়নে জিওব অর্থায়নে ২শ’ ৬ কোটি টাকার কাজ চলছে। এরমধ্যে ১শ’ ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফ্লাইওভারসহ রুয়েটের পূর্ব-দক্ষিণ কর্ণার হতে মেহেরচন্ডি, চকপাড়া ও খড়খড়ি বাইপাস পর্যন্ত চার লেন বিশিষ্ট ৫ কিলোমিটার বিটুমিন কার্পেটিং রাস্তা, ৯৪১০ মি. আরসিসি ড্রেন, ৯টি আরসিসি কালভার্ট, একটি ৮০৫ মিটার দৈর্ঘ বিশিষ্ট ওভারপাস নির্মাণ, ১০ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন, ১০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন, ১০ কিলোমিটার গ্যাস সরবরাহ লাইন, টিএনটি লাইন স্থাপন কাজটি করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেড। প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হয়। এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ২২সালের জুনে। কিন্তু কোনো কাজই শেষ হয়নি।

আরডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলীর দেয়া তথ্য মতে, ওভারপাস, চারলেন সড়ক, ড্রেন, কালভার্ট, রাস্তা ও ওভারব্রিজের লাইটিং ও টিএনটি লাইন স্থাপন হয়েছে শতভাগ। এ কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে মর্মে গত জুলাই মাসে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। গত ১৯ জুলাই ও গত ২৪ জুলাই আরডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক সাক্ষরিত দুটি প্রতিবেদনে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকেও বিলও প্রদান করেছেন।

সরজমিন দেখা যায়, কোনো কাজই সম্পন্ন হয়নি। এখন পর্যন্ত রাস্তা ও ওভারব্রিজে লাইটিংয়ের কাজ শুরুই হয়নি। রুয়েট থেকে বাইপাস ৫কিলোমিটার চারলেন সড়কের ড্রেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র তিন কিলোমিটার। এক কিলোমিটার ড্রেনের কাজ সবেমাত্র শুরু হলেও বাকি এক কিলোমিটার ড্রেনের কাজ শুরুই হয়নি। ৫ কিলোমিটার রাস্তার কোথাও কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হয়নি। বিশেষ করে ওভার ব্রিজের দক্ষিন পাশ থেকে রুযেট পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তায় ভরাট ও ইটের খোয়া ফেলা হয়েছে। এছাড়া রুয়েট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার কাজ এখনো শুরু হয়নি। রাস্তা বা ড্রেনের কাজ শুরু তো দুরের কথা এখন পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা বাড়িও ভাঙ্গা হয়নি।

দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেডকে পাইয়ে দিতে নির্বাহী প্রকৌশলী আরডিএ’র ওয়েব সাইটে টেন্ডার প্রচার না করে রুয়েটের ওয়েব সাইটে এই টেন্ডার প্রকাশ করে। প্রকল্পে রাস্তার সাব-বেজ ও ড্রেনের সোলিংয়ের জন্য এক নম্বর ইট ব্যবহারের কথা বলা হয়। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে ভূমি অধিগ্রহণের সময় যে পুরাতন বাড়ী ভাঙ্গা পড়ে সেই সব বাড়ীর নুনা ইট দিয়ে রাস্তার সাব-বেজ ও ড্রেনের সোলিং কাজ শুরু করে। পরে নুনা ধরা ইট ব্যবহারের প্রমান পাওয়ায় নির্বাহী প্রেকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। আব্দুল্লাহ আল তারিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন লিমিটেডে চাকরি করতেন। যার কারণে তিনি এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশল ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।

আরডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিকের মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, যদি কেউ অভিযোগ করে থাকে সেগুলো সঠিক নয়। আর যদি দুর্নীতি দমনে অভিযোগ করে থাকে সেগুলো আমাকে ফেজ করতে হবে। আর এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।