রাবিতে অর্ধযুগ ধরে অকেজো ৮৫ লাখ টাকার আধুনিক এক্সেস গেইট

রাবি প্রতিনিধি: শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাপ্তরিক কাজ অনলাইনের আওতায় আনতে দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৭ সালে স্মার্ট আইডি কার্ড চালু করেছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে বসানো হয়েছিল প্রায় ৮৫ লাখ টাকার ৬টি এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম (প্রবেশাধিকার) গেট। তবে মাত্র দুইমাস কার্যকর ছিলো এ গেটগুলো।

প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয়কৃত আধুনিক এই গেটগুলো অর্ধযুগ ধরে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ঠেকাতে ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটক ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের প্রবেশমুখে তিনটি করে মোট ৬টি এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম (প্রবেশাধিকার) গেইট বসানো হয়। স্মার্ট আইডি কার্ড ব্যবহারকারীদের যাতায়াতের বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য বসানো হয়েছিলো এসব উন্নত মানের প্রবেশাধিকার গেট।

শুধুমাত্র স্মার্ট কার্ডধারীরাই এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করে এসব গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে বলে জানানো হয়েছিল। ফলে ভর্তির সাথে স্মার্ট আইডি কার্ড বাবত অতিরিক্ত চারশত টাকা ফি প্রদান করে আসছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু স্মার্ট আইডি কার্ডের প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছে না তারা। উন্নত প্রবেশাধিকার গেটগুলো বসানোর মাস-দুয়েক না যেতেই অকেজো হয়ে পড়ে। এত দামে ক্রয় করা এসব মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ার অর্ধযুগ পার হলেও সেদিকে নজর নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এমনকি আধুনিক গেইটগুলো রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ মিজানউদ্দিনের সময়কালে ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা হয়েছিল আধুনিকমানের ছয়টি প্রবেশাধিকার গেইট। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১কোটি টাকার উপরে। মেশিনগুলো ব্যবহার করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট আইডি কার্ডের প্রচলন করেন তাৎকালীন প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট কার্ড চালু করতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ব্যয় করতে হয়েছিল নির্দিষ্ট অর্থ যার পরিমাণ নিদিষ্ট করে জানা যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সম্পদ নষ্ট হওয়ার পেছনে প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, চালু হওয়ার কিছুদিন পর থেকে বন্ধ রয়েছে উন্নত মানের প্রবেশাধিকার গেটগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে মতো গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে এসব মেশিন থাকা খুবই প্রয়োজন। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন যারা নিয়মিত অফিস করেন না। এগুলো সচল থাকলে তাদের যথাযথ উপস্থিতি সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব। তারা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিমাণে চুরির ঘটনা ঘটছে ফলে প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনসহ একাডেমিক ভবনগুলোতেও এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম (প্রবেশাধিকার) গেটের আওতায় আনা প্রয়োজন।

আধুনিক মানের এ মেশিনগুলো যদি বিশ্ববিদ্যালয় চালু না করে তাহলে এভাবে নষ্ট হওয়ার চেয়ে বিক্রি করে দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাগারে মোটা অঙ্কের টাকা জমা হবে বলে তারা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভবনগুলোও অনিরাপদ এমনটাই জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবন ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নিরাপত্তার জন্য ক্রয়করা আধুনিক সরঞ্জাম এভাবে অকেজো হয়ে পড়ে থাকাটা খুবই দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নিরাপদ রাখার স্বার্থে, পুরোনো সরঞ্জামগুলো পুনরায় চালু করাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনেও আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করা অতীব জরুরি।

এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সনদ শাখার দায়িত্বে থাকা আলমগীর হোসেন সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম প্রবেশাধিকার গেটগুলো থাকা খুবই প্রয়োজন। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত অফিসে আসার যাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকবে।

কিন্তু এতো দামে ক্রয়কৃত গেইটগুলো এভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকাটা কাম্য নয় বলে জানান তিনি। এ বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. খাদেমুল ইসলাম মোল্লা বলেন, মেশিনগুলো অনেকদিন যাবত ব্যবহার হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অনুমতি দিলে এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম (প্রবেশাধিকার) গেটগুলো আবারও সচল হতে পারে বলে জানান এ অধ্যাপক।

অকেজো মেশিনগুলো কার্যকর করতে বিশেষভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এগুলোকে চালু করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। আধুনিক গেটগুলো দীর্ঘদিন পরে থাকার ফলে এখন কি অবস্থায় আছে সেগুলো আগে দেখতে হবে। প্রবেশাধিকার গেইটগুলো অকার্যকর হওয়ার পিছনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত অবহিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

Comments (০)
Add Comment