বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে কারুকার্য খচিত হাতপাখা!

মনিরুল ইসলাম, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: আধুনিক যুগে দিনের পর দিন হারিয়ে যেতে বসেছে নানান প্রাচীন নিদর্শনগুলো। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নিদর্শন হলো হাতপাখা।

 

নওগাঁর সাপাহারে সময়ের সাথে তালমিলিয়ে চলতে গিয়ে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে হাতপাখার ব্যাবহার। বৈদ্যুতিক পাখা, এয়ারকন্ডিশন সহ নানান ধরণের আকর্ষনীয় প্লাষ্টিকের হাত পাখার দাপটে বিলুপ্তির পথে প্রাচীন নিদর্শন এবং নিজ হাতে তৈরীকৃত হাতপাখা।

 

যাতে করে হারাচ্ছে কারুশিল্পের একটি অংশ। আবহমানকাল থেকে যখন বিদ্যুতের বালাইও ছিল না,তখন থেকেই মানুষের কাছে প্রাধান্য পেতো হাতপাখা। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত নানাভাবে পাখার ব্যবহার চলছে। অতি গরমে বাতাসকে চলমান করে, গরম হাওয়া সরিয়ে অপেক্ষাকৃত শীতল হাওয়া প্রবাহের জন্য হাতপাখার ব্যবহার শুরু হয়।

 

পরবর্তী সময়ে রুপান্তরের ধারাবাহিকতায় হাতপাখা একটি অলঙ্কারিত শিল্পে সৌন্দর্য লাভ করেছে। প্রায় দশ বছর আগে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে হাতপাখার ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও এখন আর লক্ষ করা যায় না। হাতপাখার সাহায্যে যতটা হাওয়া বওয়ানো যায়,তার চেয়ে বড় জায়গা ঠান্ডা রাখতে ভিন্ন প্রযুক্তির প্রয়োজন দেখা দিল।

 

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে ঐতিহ্য অন্যতম হাতপাখা গল্প,ছড়া,কবিতা,গান ও উপন্যাসের বহু জায়গা দখল করে আছে। উপজেলায় পাখা তৈরির ক্ষেত্রে অনেক পরিবার নিয়োজিত রয়েছে। তালপাখা তৈরির ক্ষেত্রে আগে এ অঞ্চলের গ্রামের গরিব মানুষ তালপাতা,বাঁশের কঞ্চি, বাকল বিভিন্ন রকম কাপড় সংগ্রহ করে পাখা বানাত।

 

কিছু কিছু মানুষ তালপাতা,বাঁশের কঞ্চি স্বল্পমূল্যে পাতা কিনেও পাখা বানাত অনেকে। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ কারিগর বিক্রির জন্য পাখা তৈরি বন্ধ করেছেন। তবে অনেক হাতপাখার প্রধান কারিগর বা কারুশিল্পি মহিলারা নিজে ব্যবহারের জন্য কাপড়ের হাতপাখা তৈরি করছেন।

 

তারা সুতা দিয়ে কাপড়ের পাখা তৈরির ক্ষেত্রে, সুতা দিয়ে ফুল তোলার আগে আউট লাইন ড্রইং করে নিয়ে ফর্মা তৈরির জন্য কারুশিল্পির কাজ করেন।এছাড়া এ পাখাগুলোতে রয়েছে নানান ধরনের ডিজাইন,ফুলের নকশা। গ্রামের বৃদ্ধরা জানান, গ্রামের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে গিয়েছে। ফলে প্রতি বাড়িতেই ইলেক্ট্রিক পাখা।

 

হাতপাখার গ্রয়োজনীয়তাও কমে যাচ্ছে। অথচ পাঁচ বছর আগেও অনেক পরিবার হাতপাখা ব্যবহার করতো। আমরা আগের দিনে হাতপাখার হাওয়া খেয়ে যে তৃপ্তি বা শান্তি পেয়েছি তা বিদ্যুতের পাখা, এসি,ফাইবারের পাখাও কোন দিনও দিতে পারবে না। এভাবেই অবহেলা ও গুরুত্বের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে অতি প্রাচীন হাতপাখা।

 

তাই এ হাতপাখা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার কমে হাতপাখার ব্যবহার বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।

Comments (০)
Add Comment