বহুবছর আগে থেকে গ্রাম-গঞ্জে এমনকি শহরে বসবাসকারীরা মাটি-বাঁশ ও তালের কাঠের সমন্বয়ে গড়ে তুলতেন মাটির বাসস্থান। এঁটেল ও বেলে মাটির মিশ্রনে তৈরী হতো মাটির বাড়ি। একটি মাটির বাড়ি তৈরী করতে সময় লাগত ছয় মাসেরও বেশি। সামর্থ্য অনুযায়ী মাটির বাড়ীকে কেউবা বানাত দ্বিতল পর্যন্ত । বাড়ি তৈরী শেষে খড়ের চালা ও টিন দেওয়া হত ছাদে। বিভিন্ন নকশা ও মনোমুগ্ধকর কারুকার্য দিয়ে দর্শনীয় করে তুলত সেসব বাড়ি। বাড়ির দেয়াল তৈরী ও চালা দেবার পরে পথচারীদের দৃষ্টি আর্ষন করার জন্য বাইরের দেয়ালে ছাপানো হত নানা রকম নকশা। এছাড়াও বাড়ির প্রাচীরটাও দেওয়া হতো মাটি দিয়ে। বাড়ীর আঙ্গিনায় ও চারিপাশে লাগানো থাকতো নানা ধরণের বনজ-ফলদ ও ঔষধী গাছ। বাড়ি পাশে লাগানো হত ইউক্যালিপটাস, মেহগনী ,নিমগাছ সহ নানা ধরণের বৃক্ষ। যার সুশীতল ছায়ায় বাড়ি থাকতো ঠিক এসির মতো ঠান্ডা। আগের যুগের জমিদারগন মাটির বৈঠকখানায় বসে চালাতেন আমোদ-প্রমোদ সহ বিচারিক কার্যক্রম।
এসব বাড়ীর ভিতরে চৈত্র মাসের প্রখর দাবদাহেও থাকত শীতল আবহাওয়া।আবার প্রচন্ড শীতের মাঝেও উষ্ণতা অনুভব করত বসবাসকারীরা। এজন্যই ‘এসি’ নামে পরিচিত ছিল মাটি দ্বারা তৈরী বাড়ী। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে সেইসব মাটির বাড়ী।
বর্তমান সময়ে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও দালান বাড়ী বানানোর জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন এলাকার লোকজন। যেন পুরনো ঐতিহ্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে নতুন আঙ্গিকে গড়তে চায় নিজেদের।
ইসলামপুর গ্রামের বৃদ্ধ ইসাহাক আক্ষেপের স্বরে বলেন, “বারে আগে মাটির বাড়িত মেলা শান্তি আচলো। পরে বেটারা ইটার বাড়ি বানাচে কিন্তু আগের মতন সুক-শান্তি নাই”।
এছাড়াও বয়োবৃদ্ধদের সাথে কথা হলে তিনারা আক্ষেপ করে জানান, বর্তমানে কলিযুগ আমার জন্যেই এ ধরণের অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। শুধু মাত্র মাটির বাড়ী নয় : বিভিন্ন ধরণের পুরনো ঐতিহ্য প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাটির বাড়ি সম্পর্কে হয়তোবা জানবেওনা এমন ধারণা করছেন বয়োবৃদ্ধরা।