আলমগীর,বিনোদন :
‘মুখোশ মানুষ’ নাটক থেকে চলচ্চিত্রে রূপান্তর করেছেন এর পরিচালক আরাফাত রহমান জুয়েল। আর চলচ্চিত্র মুক্তির ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও সেন্সর বোর্ড ‘মুখোশ মানুষ’-এর ছাড়পত্র দিয়েছে। এ অবস্থায় হিল্লোল-নওশীন অভিনীত সিনেমাটি মুক্তির আগেই বিতর্কের মুখে পড়েছে।
জানা গেছে, মুখোশ মানুষ-এর গল্পকার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সংস্কৃতিকর্মী নাসির উদ্দিন। সাইবার ক্রাইমের শিকার এক নারীর সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সংকট নিয়ে ‘নীল’ নামে গল্প লেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়কার পরিচিত সংস্কৃতি কর্মী নাসির। কিন্তু গল্পের এই থিমকে পাশ কাটিয়ে যৌনতাকে ‘ট্রাম্প কার্ড’ করে তোলা হলে নাসির এতে আপত্তি তোলেন। কিন্তু নির্মাতা যৌনতাকে প্রাধান্য দিয়েই নাটকটি নির্মাণ করেন। কোনো চ্যানেল নাটকটি না কিনলে নাট্যকার নওশীন-হিল্লোলের একটি যৌনতার দৃশ্য ইউটিউবে আপ করেন। ভিডিও ক্লিপটি অসংখ্য ভিজিটর দেখেন। এ সফলতার পরই নাটকটিকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখোশ মানুষ : দ্য ফেক’ নামে বলা শুরু করেন এর নির্মাতা। কিন্তু এবার গল্পকারের নাম বাদ দেওয়া হয়। সেখানে কাহিনীকার হিসেবে ওহিদুর রহমানের নাম যুক্ত করা হয়। নাসিরের নাম রাখা হয় মূল ভাবনাকার হিসেবে। সে সময় নাসির বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ ঘটনার আপত্তি জানিয়ে প্রতিবাদলিপি পাঠান। পরে চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে জুয়েল গল্পকার নাসিরের কাছে অনুমতি চান। নাসির অনুমতি না দিলেও চলচ্চিত্রটি বানানো হয়।
জুয়েলের অনুরোধে নাটক নির্মাণের জন্য তাকে নিজের লেখা ‘নীল’ গল্পটি দেন তিনি। পরে গল্পটির নাম ‘মুখোশ মানুষ’ রাখা হয়। এর জন্য সামান্য পারিশ্রমিকও দেওয়া হয় নাসিরকে। নাটকের চিত্রনাট্যও লেখেন নাসির। পরে শুটিং চলাকালে যখন নাসির দেখেন সাইবার ক্রাইমের শিকার হওয়া মেয়েটির সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সংকটকে তুলে না ধরে যৌনতাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে তখন তিনি এ ব্যাপারে আপত্তি তোলেন। নির্মাতা এর বিপরীতে ‘নওশীনকে ফলো করে স্টোরি বলা; ভাই এটা হিট বানানো অনেক জরুরি, সেক্স, বিতর্কের ট্রাম্প কার্ড হবে সেক্স’- এ সব যুক্তি দেন।
যখন বুঝতে পারি আমার গল্পটাকে জুয়েল ধর্ষণ করছেন তখন আমি প্রথম আপত্তি তুলি। কিন্তু তিনি যৌনতাকে ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে চেয়েছেন। পরে যখন চলচ্চিত্র নির্মাণের অনুমতির জন্য যোগাযোগ করে আমি স্পষ্টই তাকে না বলে দিই। যেহেতু তিনি নাটকটাই নির্মাণ করতে পারেননি, তাই চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো যোগ্যতা তার যে নাই এটা নিয়ে আমি নিঃসন্দেহ ছিলাম। তাকে আমার গল্প থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের কোনো লিখিত বা মৌখিক অনুমতি আমি দিইনি।
নাসিরের দাবি, মুখোশ মানুষ নাটক হিসেবে কোনো চ্যানেলে চালাতে না পেরে জুয়েল এটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বলে প্রচার করতে থাকে। নাটকে কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে তার নাম থাকলেও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নামে নাটকের যে ভার্সনটি প্রচার করা হচ্ছে সেখানে কাহিনীকারের নাম দেওয়া হয়েছে ওহিদুর রহমান।
নাসির আরো দাবি করেন, মাসদুয়েক আগে জুয়েলের সহকারী পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাকে ফোন দিয়ে জানান, ‘মুখোশ মানুষ’- সিনেমার কাহিনীর মূল ভাবনার জন্য তাকে ২০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। নাসির বলেন, ‘আমার গল্প থেকে চলচ্চিত্র বানানোর অনুমতি যেখানে দেওয়া হয়নি সেখানে পারিশ্রমিকের প্রশ্ন কেন আসবে?’
‘মুখোশ মানুষ’-এর সিনেমার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে নির্মাতা জুয়েল বলেন, ‘আমার সিনেমার স্ক্রিপ্ট ও ডায়ালগ লিখেছেন ওহিদুর রহমান। একটু খুলেই বলি– ‘দ্য ফেক’ নামে একটি নাটক বানিয়েছিলাম। নাটকের সঙ্গে চলচ্চিত্রটিকে গুলিয়ে ফেলছেন অনেকেই। আসল ব্যাপার হল যেটা নাটক ছিল, সেটা ছিল আলাদা একটা প্রজেক্ট। নাটকটি নিয়ে অনেক আলোচনা হলে সেটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিই। নাটকের গল্পকার পরে দাবি করেন এই সিনেমার গল্পটাও তার। আসলে তা নয়।’
জুয়েল আরও বলেন, ‘ফিল্ম একটা বড় ব্যাপার। সবাই আসলে ফিল্মের গল্প লিখতে পারেন না। যিনি পারবেন মনে হয়েছে আমি তাকে দিয়ে চলচ্চিত্রের গল্পটি লিখেয়েছি। একটি মেয়ের জীবনের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। সিনেমার গল্পটি সিনেমার মতো করেই লেখা হয়েছে। নাটকের গল্প আর সিনেমার গল্প এক হয় না কখনোই। পুরো চলচ্চিত্র ফোর-কে ক্যামেরা দিয়ে শুটিং করা হয়েছে। নাটকটি আমি মার্ক-থ্রি দিয়ে শুটিং করেছিলাম। এটা ফোর-কে ক্যামেরা দিয়ে শুটিং করা, চেন্নাই থেকে কালার গ্রেডিং করা। নাটকের সাথে এটার কোনো সম্পর্ক নাই। শুধু গল্পের প্লটটি একই। গল্পটি ছিল একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। আর একটি সত্য ঘটনা নিয়ে অনেকেই গল্প লিখতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই।’