গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : স্কাউটদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তোমরাই জাতির ভবিষ্যত। তোমরাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে পারবে। তোমরা যারা এ রোভার মুটে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছো তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। আশা করবো এখানে তোমরা অর্জিত অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে নিজেদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলবে। আমাদের দেশকে আমরা সবাই মিলে শান্তিময় করবো। তবে তা কারো কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা করে নয় বা কারো অনুকম্পা নিয়ে নয়। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪০ বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রোভার স্কাউটদের সর্ববৃহৎ সমাবেশ ‘জাতীয় রোভার মুট’ এর সামাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থ বছরে পৃথক একটি প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ২৪তম রিজিওনাল স্কাউট কনফারেন্স আয়োজন করেছে। মৌচাকে জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০১০-২০১৬ পর্যন্ত সদ্য সমাপ্ত কাবিং সম্প্রসারণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পের জন্য ১১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১১ হাজার নতুন কাব স্কাউট দল গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হিউম্যান রিসোর্স থ্রু স্কাউট প্রকল্পের জন্য ১৭ কোটি সাত লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার নতুন স্কাউট দল, পাঁচটি জেলায় স্কাউট ভবন, দিনাজপুর ও কুমিল্লায় মহিলা ডরমেটরি নির্মাণ করা হয়। এছাড়া জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রাচীরসহ সংস্কার কাজ এবং সিলেট আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অধিক হারে বৃক্ষ রোপনের লক্ষ্যে স্কাউটদের আরো বেশি করে সম্পৃক্ত করার অনুরোধ স্কাউটদের উদ্দেশে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘুর্ণিঝড়, বন্যা অগ্নি দুর্ঘটনা ও শীতার্ত মানুষের সেবায় তোমরা কাজ করে যাচ্ছ। দুর্যোগে সেবাদানের লক্ষ্যে স্কাউটসদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা হয়েছে জেনে আনন্দিত হয়েছি।
বাংলাদেশ স্কাউট আন্দোলনকে জোরদার করতে সরকার ইতোপূর্বে ‘বাংলাদেশ স্কাউটিং সম্প্রসারণ ও স্কাউট শতাব্দি ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক ১২২ কোটি ১০ লাখ টাকার একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদন করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাব স্কাউটিং বাড়ানোর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা মৌচাক জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্থান সঙ্কুলান সমস্যা নিরসনের জন্য ৯৫ একর বনভূমি স্কাউটদের ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। এছাড়া স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ক্যাম্প সাইট স্থাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও মানিকগঞ্জে জমি বরাদ্দ দিয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ৩৬৫টি কলেজ সরকারিকরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেসব উপজেলায় সরকারি স্কুল বা কলেজ নেই, সেসব উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করা হবে। ৩১ হাজার ১৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম স্থাপন করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। একই সময়ে বেসরকারি খাতে ৪২টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমাদের সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে একটি যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। গত ৮ বছরে সর্বমোট প্রায় ২২৫ কোটি ৪৩ লাখ এক হাজার ১২৮টি বই বিতরণ করা হয়েছে। বিশ্বে বিনামূল্যে বই বিতরণের এমন নজির নেই। বিদ্যালয়বিহীন এক হাজার ১২৫টি গ্রামে নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার মানিকদহের হাউজিং এলাকার অনুষ্ঠান স্থলে পৌছান। এসময় রোভার স্কাউটের সদস্যরা প্যারেড প্রদর্শন করে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সালাম গ্রহন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পতাকা তুলে দেন। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা উড়িয়ে রোভার স্কাউটদের সর্ববৃহৎ সমাবেশ ১১তম “জাতীয় রোভার মুট” এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পাশাপাশি ১০ টাকা মূল্যমানের স্মারক ডাক টিকিট উদ্বোধন করেন। পরে তিনি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে আসেন। সেখানে তিনি স্থানীয় নেতা-কর্মিদের সাথে মত বিনিময় করেন। সেখানে তিনি প্রায় আধা ঘন্টা অবস্থান করেন। এ সময় সেখানে প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজুলুল করিম সেলিম এমপি, ডাক ও টেলিযোগযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখমোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সদস্য এস এম কামাল, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারন সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, গোপালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ওপৌরমেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিটুসহ সহযোগি সংগঠনেরনেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বেলা ১টা ৩৬ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় পৌছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধী সৌধ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত ও দোয়া করেন। এ সময় তিনি জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, শেখ হেলাল এমপি, প্রধানমন্ত্রীর ভাগিনা রেজোয়ান সিদ্দিকী ববি, তাঁর পত্মী ও দুই পুত্র পরিবারের অন্যান্য সদস্যগণ প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে ছিলেন।
বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো শাহ কামাল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণঅলয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব ড.মোঃ মোজাম্মেল হক খান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ বাড়ীতে রাত্রি যাপন করবেন। আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে ঢাকা উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করবেন।