গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : কোটি টাকার বিনিময়ে হাটের পুরাতন দোকানদারদের উচ্ছেদ করে পজিশন বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় চামারী ইউপি চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। নাটোরের গুরুদাসপুর-সিংড়া সিমান্তবর্তী বিলদহর হাটে ওই ঘটনা ঘটেছে।
অথচ হাটের ওই জায়গা বরাদ্দ বা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে উপজেলা ভূমি অফিসের। ভূমি অফিসের সাথে যোগসাজসে চামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পূর্বের মালিকদের উচ্ছেদ করে টাকার বিনিময়ে তার ইচ্ছামত ব্যক্তিদের হাটের জায়গা বরাদ্ধ দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। এঘটনায় স্থানীয় ব্যবাসয়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, প্রায় ১৫দিন আগে চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম তার বাহিনী নিয়ে হাটে আতংক সৃষ্টি করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই ওই বাহিনীর লোকজন গুরুদাসপুরের কাপড় ব্যবসায়ী কাজল, নরেন চন্দ্রসহ প্রায় ১৮জন ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গতে শুরু করেন। একপর্যায়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানালে তাদের প্রাণ নাশের হুমকী দেওয়া হয়। এমনকি গুরুদাসপুর উপজেলার সাবগাড়ীর আজগর আলীকে মারপিট করে রক্তার্ত জখম করে। মামলার ভয়ে তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে একটি পজিশন দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় বলে তারা জানায়।
ক্ষতিগ্রস্থ অন্ততঃ দশজন কাপড় ব্যবসায়ী জানান, ওই জায়গায় তারা পজিশন ক্রয় সূত্রে ৪০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদনের প্রেক্ষিতে দোকান লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরই মধ্যে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে দিয়ে টিনসহ সরঞ্জামাদীও নিয়ে গেছে চেয়ারম্যানের বাহিনী। তারা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় অন্যদের পজিশন দেওয়া হয়েছে বলে তারা জানান। এখন সেখানে নতুন ইট দিয়ে আধাপাকা ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। এজন জানান, ৪০ বছর পুর্বে ৬ হাজার ৫শ’ টাকায় জায়গা কিনে ব্যবসা করছিলাম। তখন মাঠের জমি কিনলে অন্ততঃ দশ বিঘা জমি কিনতে পারতাম। চেয়ারম্যান ও তার বাহিনী আজ আমাকে সর্বশান্ত করেছে।
গুরুদাসপুরের ব্যবসায়ী কাজল ও নরেন অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান উপস্থিত থেকে তাদের টিনের চালাঘর ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। এবং বলেছে কোন হিন্দু এখানে জায়গা পাবেনা। ঘটনার পর থেকে তাদের ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। চেয়ারম্যানের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। উপজেলা ভূমি অফিস থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্যবসা বন্ধ থাকায় জীবিকা নির্বাহ করা মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সিংড়া উপজেলার বিলদহর হাট-বাজারের ১৮জন পুরাতন ব্যবসায়ীকে কোন কারন ছাড়াই ভুমি অফিসের সাথে যোগসাজসে উচ্ছেদ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান রশিদুলের নেতৃত্বে আব্দুল মোতালেব, ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, নুরুল, রুহুল আমিন, রাজদুল, সাহেলসহ ১৫/২০জনের বাহিনী ওই তান্ডব চালায়। এসময় ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানের চালা ঘরের টিনসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদী নিয়ে যান চেয়ারম্যান বাহিনী। ঘরের উচ্ছেদকৃত জায়গা কোটি টাকার বিনিময়ে চেয়ারম্যান বরাদ্ধ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৪টি দোকান ঘর বরাদ্দ দিতে গিয়ে প্রত্যেক জনের কাছ থেকে ৫-৭ লাখ করে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
চামারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রশিদুল ইসলাম জানান, বকুল-মধু নির্মানাধীন ব্রীজের কারনে কিছু দোকান ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তবে দোকান ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত সরকারী নয়। তবে অন্য দোকানীদের পুণঃবাসনের জন্য বাজারের জায়গা দেওয়া হয়েছে। কোন টাকা-পয়সা নেওয়া হয়নি।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সরকার জানান, হাটের জায়গায় ব্যবসা করতে প্রতিবছর লাইসেন্স নিতে হয়। একমাত্র দখলদারই ওই লাইসেন্সের দাবিদার। তা দেওয়ার এখতিয়ার ভূমি অফিসের। অন্য কেউ সেটা বরাদ্ধ দিতে পারেন না। ইতি মধ্যে চেয়ারম্যানকে ডাকা হয়েছে। অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Prev Post
Next Post