গুলির পরও মিয়ানমারে বিক্ষোভ অব্যাহত

0 ৭১৪

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে কঠোর দমননীতি সত্ত্বেও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বুধবার পঞ্চম দিনে ফের রাজপথে নেমেছেন দেশটির বিক্ষোভকারীরা। দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ছিল সবচেয়ে সহিংস দিন। এদিন রাজধানী নেপিডোতে বিক্ষোভে গুলি চালায় দেশটির পুলিশ। সহিংস ঘটনার পর বুধবার সকালেই নেপিডোর রাস্তায় নামেন বিক্ষোভকারীরা। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের অসহযোগের ডাকে সাড়া দিয়ে শত শত সরকারি কর্মচারী রাজধানীতে মিছিল করেছেন। এতে যোগ দিয়েছেন চিকিৎসক, শিক্ষক, রেলকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া যুবনেতা এস্টার জে নাও বলেন, ‘আমরা চুপ থাকতে পারি না। আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সময়ই যদি রক্তপাত হয়, তাহলে আমরা তাদের (সেনাবাহিনী) দেশটি দখল করতে দিলে আরও অনেক কিছুই হবে।’

মঙ্গলবার নেপিডোতে বিক্ষোভকালে পুলিশের গুলিতে আহত এক বিক্ষোভকারীর অবস্থা গুরুতর। এক চিকিৎসক বলেছেন, এই বিক্ষোভকারীর মাথায় আঘাত রয়েছে। তার বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। গুরুতর আহত এই বিক্ষোভকারী একজন নারী।

চিকিৎসকেরা বলেছেন, এক্স-রে করে দেখা গেছে, এই নারী বিক্ষোভকারী গুলিতে আহত হয়েছেন। গতকালের ঘটনায় আহত আরও তিনজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে তাঁরা আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গতকাল মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডো ছাড়াও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ হয়। অন্যান্য স্থানের বিক্ষোভেও শক্তি প্রয়োগের খবর পাওয়া গেছে। সেসব জায়গায়ও বিক্ষোভকারীরা আহত হয়েছেন। আর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পুলিশের আহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটপাটকেলে পুলিশ আহত হয়েছে।

বিক্ষোভে শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। তারা গণতন্ত্র পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বলেছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের জন্য জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রতিনিধি ওলা আল্মগ্রেন বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের ওপর চালানো দমনপীড়ন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ব্যক্তিদের তাৎপর্যপূর্ণ পরিণতির মুখোমুখি করতে তারা কাজ করছে। মিয়ানমারকে করা সহায়তার বিষয়টি তারা মূল্যায়ন করছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, ‘ক্ষমতা ত্যাগ, নির্বাচিত সরকার পুনর্বহাল, আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে সব বাধা প্রত্যাহার ও সহিংসতা থেকে বিরত থাকার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা আবার আহ্বান জানাই।’

এ দিকে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি চালিয়েছে। পুলিশ প্রতিবাদকারীদের চলে যেতে বললেও তারা প্রত্যাখ্যান করে, এরপরই তাদের ওপর জল কামান থেকে পানি ছোড়া হয়। জল কামান প্রয়োগ ও ঠেলে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলে পুলিশ ফাঁকা গুলি চালানো শুরু করে।

তবে এখন পর্যন্ত ভিড়ের ওপর গুলি চালানো হয়নি বলেও জানিয়েছেন তারা। জন সমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। টানা চতুর্থ দিনের মতো বিভিন্ন শহরে সমবেত হয়ে সেনা শাসনের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। তবে পুলিশও ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি শহরে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে জল কামান ব্যবহার করেছে পুলিশ।

১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চি ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথ রুদ্ধ করে দেয়।

তারপর থেকে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিবাদ হলেও শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা তিন দিন ধরে দেশজুড়ে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। আর সোমবার বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের প্রতিবাদ মিছিলে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গেরুয়া পোশাক পরা বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও যোগ দেন।

এরপর ওই দিন রাতে বড় সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা, রাত্রিকালীন কারফিউ জারি ও বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করার নির্দেশ জারি করে সামরিক জান্তা। কিন্তু তারপরও অভ্যুত্থান বিরোধী অহিংস পদক্ষেপ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রতিবাদকারীরা।

মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় সবচেয়ে বড় দু’টি নগরীতে কারফিউ এবং পাঁচ জনের বেশি মানুষের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সামরিক জান্তা। বৃহত্তম দুই নগরী ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালয়ে স্থানীয় সময় রাত ৮ টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে।

পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কারফিউ বলবৎ থাকবে। মানুষজনের বেআইনি কর্মকাণ্ডে আইনের শাসন ক্ষুন্ন হওয়ার কারণে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ডিক্রিতে।

মিয়ানমারে এই অভ্যুত্থানের পেছনে অন্যতম কারণ গত নভেম্বরের নির্বাচন। এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী। এরপর পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সেনাবাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ করছেন দেশটির মানুষ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানাচ্ছে। তারা মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়ে দেশটির সেনা কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.