তানোর প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোর পৌর সদরে হাজী ওসমানের ঝুকিপূর্ন গোয়াল ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে শ্রমিক মাহবুর রহমান লিয়ন(২৯) নামের একজন নিহত হয়েছেন। তার বাড়ি পৌর সদর কুঠিপাড়া গ্রামে। সে আনেস প্রামানিকের পুত্র। অপর জন মমিন নামের আরেক শ্রমিকের কোমর ভেঙ্গে গেছে।
তার বাড়ি শীতলীপাড়া গ্রামে। সে এন্তাজের পুত্র। মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে পৌর সদর ওসমান হাজীর অন্ধকার গোয়াল ঘরে ঘটে মর্মান্তিক ঘটনাটি। এঘটনায় নিহত লিয়নের মা বাদি হয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন বলে নিশ্চিত করেন ওসি কামরুজ্জামান।
তবে এমন ঘটনার মামলা সম্পর্কে সিনিয়র সহকারী এএসপি সার্কেল(গোদাগাড়ী) সোহেল রানার কাছে জানতে চাওয়া হয় এমন মর্মান্তিক ঘটনায় কিভাবে অপমৃত্যুর মামলা হয় তিনি বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, নিহতের মা কাউকে আসামী করে মামলা করবেন না ও আহত শ্রমিকের কোন অভিভাবক আসেনি।
নিহতের পরিবার ইচ্ছে করলে কাউকে আসামী করে মামলা করতে পারবেন। কিন্তু পরিবারের কেউ যদি মামলা না করে সেক্ষেত্রে অপমৃত্যুর মামলাই হয়। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে লিয়নের স্ত্রী পিতা মাতা জ্ঞান হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, ছোট সন্তান ও গর্ভবতি স্ত্রীর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। সন্তানের মৃত্যুতে বৃদ্ধা পিতা মাতা নিথর হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, থানা মোড় থেকে উপজেলা পরিষদে আসার রাস্তা ও কুঠিপাড়া মোড়ের পশ্চিম উত্তরে হাজি ওসমানের করাত কল এবং তার পিছনে ওসমান হাজির পাকা বাড়ি, বাড়ির পশ্চিমে গোয়াল ঘর। গোয়াল ঘরে মাটির দেয়াল ছিল ঝুকিপূর্ন ভাবে। দেয়ালে গরুকে পানি খড় খাওয়ানো নান্দা বা মাটির বড় পাত্র সরানো মাত্রই দেয়াল ভেঙ্গে লিয়ন নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
আর মমিনের কোমরের উপরে দেয়াল পড়ে কোমর ভেঙ্গে যায়। সাথে সাথে দুজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে ককর্তব্যরত চিকিৎসক মাহমুর রহমান লিয়ন এবং মমিনের বেগতিক অবস্থার জন্য রামেক হাসাপাতালে রেফার্ড করা হয়। কিন্তু মৃত লিয়নের মরদেহ রামেকেই আছে, এখনো আনতে পারেননি ও মমিনের চিকিৎসা চলছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গোয়াল ঘরে কোন আলো ছিল না, অন্ধকারের মধ্যে তাদেরকে কাজে লাগান ওসমান ও ছেলে বাবুল।
ওসমানের স্ত্রী জানান, আমি গাভীর দুধ দিচ্ছিলাম। চারজন শ্রমিক কাজ করছিল গত বৃহস্পতিবার থেকে। তারা সবাই বারান্দায় ছিলেন। কিন্তু দুজন বিশাল বড় নান্দা সরানো মাত্রই দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে। মৃত্যুর খবর শুনেই বাকি দু শ্রমিক ও মালিকরা পালিয়ে যান। পরে অবশ্য আসেন।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, যে গোয়ালে কাজ করা হচ্ছিল সেখানে কাজ করার কোন পরিবেশ ছিল না। তারা নান্দা বা পানির পাত্র সরাবে না ও ভিতরে কাজও করবেনা। কিন্তু ওসমান ও তার ছেলে সাব জানায় কাজ না করলে বকেয়া টাকা দেওয়া হবে না। বকেয়া টাকার জন্য জীবনের ঝুকি নিতে গিয়ে একজন মারা গেল অপর জন সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেল। এমন মর্মান্তিক ঘটনার জন্য ওসমান ও তার ছেলে দায়ী, তাদেরকে আসামী করে জেলে দিলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হত না।
কুঠিপাড়াগ্রামের বাসিন্দারা জানান, নিহত লিয়নের ছোট বাচ্চা আছে এবং স্ত্রীর পেটেও বাচ্চা। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটে না। যে গোয়াল ঘরে কাজ করছিল সেখানে আলো নেই এবং প্রচুর ঝুকিপূর্ন অবস্থায় মাটির দেয়াল। তাদের অনেক টাকা সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলবে।
থানার ওসি কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, সার্কেল এএসপিসহ আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাটি মর্মান্তিক। এঘটনায় নিহত মাহবুর রহমান লিয়নের মা জাহানারা বেগম বাদি হয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।