দাঁতের যত্ন এবং সুস্থতার জন্য যে কাজ গুলো করা উচিত

0 ৫৮৩

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম: সুন্দর দাঁত মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রকাশে যেমন জরুরি , তেমনি মানুষের সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের জন্য দাঁতের সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা,অনেক বিষয়ে সচেতন হলেও দাঁতের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। ফলে, অল্প বয়স থেকেই আমরা দাঁতের নানা সমস্যাতে ভুগে থাকি। এছাড়া,সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করার কারণেও আমরা নানা রকম দাঁতের সমস্যাতে ভুগে থাকি। শুধু যে সুস্থ থাকার জন্য দাঁত গুরুত্বপূর্ন তা নয় আমাদের ব্যক্তিগত সৌন্দর্য প্রকাশেও অপরিহার্য। সুতরাং,শিশু থেকে বৃদ্ধ সবারই দাঁতের যত্নে আরো সচেতন হওয়া উচিত।

দাঁতের যত্নে কি কি করা উচিত সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ :

  • নিয়মিত সঠিক ভাবে দাঁতের পরিচর্যা না করার ফলে দাঁত নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক সময় দাঁতের অবস্থা এত ভয়াবহ হয় যে কোন ভাবেই দাঁতকে রক্ষা করা সম্ভব হয় না তুলে ফেলতে হয়।একটি দাঁতে দীর্ঘদিন সমস্যা থাকলে,যদি যথা সময়ে আক্রান্ত দাঁতের চিকিৎসা করা না হয় তবে,পাঁশের অন্য দাঁত ও আক্রান্ত হতে পারে।
  • সুস্থ দাঁতের জন্য নিয়মিত ২ বার এবং অন্তত ২ মিনিট ব্যয় করে সঠিকভাবে বার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। যাতে,দাঁতে লেগে থাকা খাদ্য কনা খুব ভালভাবে বের হতে পারে। না হলে এই খাদ্য কনা দাঁতের খুব ক্ষতি করতে পারে।
  • খাবার গ্রহণ করার পর অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ব্রাশ করা উচিত। যদি,৩০ মিনিট অপেক্ষা করা সম্ভব না হয় তবে খাবার খাওয়ার পূর্বে দাঁত ব্রাশ করে নেয়া উচিত। বিশেষ করে,খাবারে এসিডিক কম্পাউন্ড থাকলে খাওয়ার পর পর ব্রাশ করলে এই এসিড গুলো মুখের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে যা দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
  • সবারই সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস করা উচিত। অনেকে,ঠিক জানেনই না যে ব্রাশ কিভাবে করা উচিত। দাঁত ব্রাশ করার সময় যথাসম্ভব আলতো করে সারকুলার মোশনে দাঁত ব্রাশ করতে হবে। ব্রাশটি ভাল মানের এবং নরম হওয়া উচিত।
  • অনেকেই বছরের পর বছর ধরে একটি ব্রাশ ব্যবহার করে থাকেন।যা,দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।নিয়ম হল প্রত্যেক তিন মাস পর পর ব্রাশটি বদলে ফেলা।
  • দাঁত ব্রাশ করার পর ব্রাশটিকে খুব ভাল ভাবে ধুয়ে সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা উচিত।ব্রাশে ক্যাপ ব্যবহার করা উচিত। কেননা,ব্রাশ খোলা অবস্থায় রেখে দিলে তেলাপোকা বা অন্যান্য পোকা মাকড় দ্বারা দূষিত হতে পারে।
  • দাঁত ব্রাশ করার সময় সঠিক পরিমাণে ফ্লুরাইড সমৃদ্ধ টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। টুথপেস্ট কেনার আগে দেখে নিন টুথপেস্টে অন্তত ১৩৫০-১৫০০ পিপিএম ফ্লুরাইড আছে কিনা?
  • দাঁত ব্রাশ করার সময় জিহ্বা খুব ভালভাবে পরিষ্কার করা উচিত।সেক্ষেত্রে,টাং স্কেরেপার দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কার করা উচিত। আবার অনেক টুথব্রাশের পেছনের অংশ দিয়ে জিহ্বা করা যায়।তবে,জিহ্বা পরিষ্কার করার জন্য যদি কোনটিই পাওয়া না যায় তবে ব্রাশ দিয়েই আস্তে আস্তে পরিষ্কার করা যেতে পারে।সেক্ষেত্রে,ব্রাশ খুব ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে যেন টুথপেস্ট না থাকে।
  • শিশুদের বেবী টিথ উঠলে দাঁত ব্রাশ করে দেয়া উচিত। সেক্ষেত্রে,২-৬ বছর বয়সীদের জন্য একটি মটর দানা পরিমাণে টুথপেস্ট নেয়া উচিত এবং খেয়াল রাখা উচিত যেন দাঁত ব্রাশ করার সময় টুথপেস্ট গিলে না ফেলে।
  • দাঁত পরিষ্কার করার জন্য নিয়মিত ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা উচিত।আর,ডেন্টাল ফ্লস দাঁত ব্রাশ করার আগে ব্যবহার করা উচিত এতে করে দাঁতের গোড়াতে ময়লা থাকার সম্ভাবনা থাকে না।এরপর ব্রাশ করার শেষে,মাউথ ওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করা দাঁতের জন্য খুবই উপকারী।
  • প্রতি বছর অন্তত ২ বার ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁতের চেকাপ করা উচিত।
  • দাঁতের সুস্থতার জন্য অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার,কার্বোনেটেড বেভারেজ খাওয়া এবং ধূমপান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
  • দাঁতে বা মুখের ভিতরে যেকোন ধরণের সমস্যা হলে অবহেলা করা উচিত নয়। নিয়মিত জিহ্বার যত্ন নেয়া উচিত।জিহ্বাতে যদি কোন ধরণের পরিবর্তন যেমনঃঘা বা লাম্ফ পরিলক্ষিত হয় তবে অতি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। দাঁতকে ভাল রাখতে হলে অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা কিছু খাওয়া উচিত নয়।
  • অনেকের পান,তামাক এবং জর্দা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে যা দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল না।অনেক সময় মুখের ক্ষত বা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এই পান,তামাক এবং জর্দা। তাই,দাঁতকে সুস্থ রাখতে বাদ দিতে হবে অস্বাস্থ্যকর সব খাদ্য,পানীয়  এবুং ক্ষতিকর উপাদান।
  • দাঁতের যত্নের পাশাপাশি,নিয়মিত সুষম পুষ্টিকর খাবার এবং দাঁতের জন্য জরুরি কিছু পুষ্টি উপাদান যেমন: ভিটামিন-এ,সি,ডি,ক্যালসিয়াম,বি-কমপ্লেক্স জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।
  • যাদের প্রায় গাম ব্লিডিং হয় তাদের উচিত টক ফল বা ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া।
  • অনেক সময় আমাদের মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং সব খাবারের স্বাদ তিতা বা মেটালিক টেস্টের মত মনে হয়।এই অবস্থা হয় মূলত ভিটামিন-ডি এর অভাবে।তাই,নিয়মিত ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।

 

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।

Leave A Reply

Your email address will not be published.