দিনের শেষে রিভিউতে সর্বনাশ বাংলাদেশের

0 ১,০৩২

খেলাধুলা ডেস্ক : ব্যাটিং স্বর্গে ভারতের জন্য আর্শীবাদ হয়ে এসেছিল বাংলাদেশের ফিল্ডারদের কিছু মারাত্মক ভুল। তারই ফায়দা পুরোটা আদায় করে নিতে ভুল করেনি দলটি। রীতিমতো রানের পাহাড়ে উঠে বসেছে স্বাগতিকরা। ১৬৬ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১ম ইনিংসে ৬৮৭ রানে ডিক্লেয়ার্ড। ভারতের বিশাল সংগ্রহের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাট করতে নেমেছে বাংলাদেশ। তবে সেই চাপের সামনে দাঁড়িয়ে টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা নিরাপদে শেষ করতে পারল না টাইগাররা।

১ম ইনিংসে শেষ বেলায় এসে ভুল করলেন সৌম্য সরকার। উমেশ যাদবের বলে ঋদ্ধিমান সাহার হাতে বল তুলে দিয়ে ফিরলেন এই ওপেনার। রিভিউতেই সর্বনাশ। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেন কোহলি। ব্যাটে বল স্পর্শ করার প্রমাণ পাওয়া মিলে। পাল্টায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। সৌম্য ফিরেন ১৫ রান।

বাংলাদেশ হায়দ্রাবাদ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ১৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে করেছে ৪১ রান। শনিবার সকালে ব্যাট হাতে নামবেন তামিম ইকবাল ২৪ ও মুমিনুল হক ১ রানে। আপাতত ফলোঅন বাঁচানোটাই লক্ষ্য থাকবে সফরকারীদের।

এর আগে চা বিরতির পর মনে হচ্ছিল ঋদ্ধিমান সাহার সেঞ্চুরির অপেক্ষাতেই আছেন বিরাট কোহলি। তার এই ব্যাটসম্যানটিও তিন অংকের সেই ম্যাজিকেল স্কোরের দেখা পেতেই বুঝি ইনিংস ঘোষণা করবেন। কিন্তু তা হল না। বাংলাদেশের আরো কয়েকটা ওভার দেখে নিয়েই ডেকে নিলেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানকে। ১৬৬ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৬৮৭ রানে ১ম ইনিংস ঘোষণা করল ভারত। এই নিয়ে টানা তিন ইনিংসে ছয়শ রানের বেশি করল ভারত। এবারেরটি ভারতের সর্বোচ্চ রানের টেস্ট ইনিংসের তালিকায় থাকল পঞ্চমস্থানে।

১০৬ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেন ঋদ্ধিমান। অথচ ব্যক্তিগত ৪ রানের সময়ই জীবন পেয়েছেন তিনি। মুশফিকের বদন্যতায় পাওয়া সেই সুযোগটা কাজে লাগালেন সেঞ্চুরি করে। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট শতরান। একইসঙ্গে ক্যারিয়ার সেরাও। অন্যপ্রান্তে থাকা রবিন্দু জাদেজা ৬০ রান নিয়ে ফিরেছেন সাজঘরে। দু’জন মিলে সপ্তম উইকেট চুটিতে জমা করেন ১১৮ রান।

হায়দ্রাবাদের ব্যাটিং স্বর্গে অারো একটা দিন ব্যাট হাতে রাজত্ব করলেন স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে নেমে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে টাইগাররা। অবশ্য দু’দিন ধরেই একের পর এক ভুল করে যাওয়ার মাশুল গুনল দল।

তবে শুক্রবার দিনটা আসলে বিরাট কোহলির। ক্যারিয়ারের সেরা সময়টাই কী তাহলে পার করছেন তিনি? এইতো সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে খেলেছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। ২৩৫ রান করে ফিরেছিলেন। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষেও ডাবল সেঞ্চুরি। রীতিমতো ইতিহাস গড়া যাকে বলে। টানা চার সিরিজে চারটি ২০০ ছাড়ানো ইনিংস। টেস্ট ইতিহাসে এমন কীর্তি এর আগে কেউ গড়তে পারেনি! স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও রাহুল দ্রাবিড়কে টপকে গিয়ে এই রেকর্ড গড়লেন কোহলি।

এমন ইতিহাস গড়েই অবশ্য সাজঘরে ফিরে গেলেন ভারত অধিনায়ক। তাকে থামালেন তাইজুল ইসলাম। ২৪৬ বলে ২০৪ রানের নান্দনিক এক ইনিংস। যেখানে ২৪ চারের সমাহার! এর আগে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন ২৮ বছর বয়সী এই মহা তারকা। ভারতীয় মৌসুমে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানের রেকর্ডও অবশ্য আগেই গড়ে ফেলেছেন কোহলি। এই মৌসুমে এখন তার রান ১১৬৮। আগের রেকর্ড গড়েন বিরেন্দর শেবাগ। ২০০৪-০৫ মৌসুমে, ১১০৫ করেন তিনি।

এরপর দলকে আরো সংহত জায়গায় নিয়ে গেছেন ঋদ্ধিমান সাহা এবং রবিচন্দন অশ্বিন। দু’জন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে করেন ৭৪ রান। ৩৪ রান করা অশ্বিনকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

শুক্রবার লাঞ্চ বিরতির আগে বিরাট কোহলি আর আজিঙ্কা রাহানে জুটি ভাঙেন তাইজুল। এ দু’জন ২২২ রানের জুটি গড়ে বেশ মজবুত অবস্থানে নিয়ে যান স্বাগতিকদের। মেহেদী হাসান মিরাজের অসাধারন ক্যাচে রাহানে বিদায় নেয়ার আগে করেন ১৩৩ বলে ৮২ রান।

এদিনও দৃষ্টিকটু ফিল্ডিং দেখা গেছে বাংলাদেশের। ব্যাক্তিগত চার রানের সময়ই অবশ্য ফিরতে পারতেন ঋদ্ধিমান। কিন্তু তাইজুলের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের সহজতম সুযোগটা হাতছাড়া করেন উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো অধিনায়ক মুশফিক। তাইজুলের বল এগিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেন নি। বল চলে যায় মুশির গ্লাভসে। প্রথম প্রচেষ্টায় বেলস ফেলতে ব্যর্থ। পরে ফেললেও আর লাভ হয়নি, জায়গায় চলে আসেন ঋদ্ধিমান!
স্পিনার তাইজুল ১৫৬ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ১৬৫ রানে ২ উইকেট নেন মেহেদী।

শুক্রবার সকালে উইকেটে নামেন দুই নট আউট ব্যাটসম্যান কোহলি ১১১ ও আজিঙ্কা রাহানে ৪৫ রানে। সকালেই ব্যাক্তিগত ৬২ রানের সময় জীবন পান রাহানে। কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে পয়েন্টে ক্যাচ ভেসেছিল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সাব্বির সেটা হাতে জমাতে পারেন নি!

এর আগে বৃহস্পতিবার হায়দ্রাবাদ টেস্টের প্রথম দিনে টাইগারদের বিপক্ষে ভারত প্রথম ইনিংসের ৩ উইকেট হারিয়ে ৯০ ওভারে করে ৩৫৬ রান। বিরাট কোহলি ১৩০ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬ নম্বর সেঞ্চুরি তুলে নেন। ব্যক্তিগত ৩৫ রানের সময়ই আউট হতে পারতেন মুরালি বিজয়। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যর্থতায় অবিশ্বাস্য ভাবে সহজ রান আউট থেকে বেঁচে যান। নবম টেস্ট শতরানের ইনিংসটি শেষ হয় ১০৮ রানে।

চেতেশ্বর পুজারা জীবন পেয়ে অবশ্য শতরান করতে পারেন নি। ৮৩ রানে ফিরে যান তিনি। ১৭৭ বলে ৯টি চারে ৮৩ রান করেন। রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘ঐতিহাসিক’ ম্যাচে অবশ্য টস জিতেন বিরাট কোহলি। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারত গড়ে পাহাড়সম স্কোর। কে জানে এর নিচেই কীনা চাপা পড়ে মুশফিকের বাংলাদেশ!

Leave A Reply

Your email address will not be published.