নওগাঁয় ধর্ষণ মামলায় ২ আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড

0 ১০৪
নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় পৃথক ধর্ষণ মামলায় দুই আসামীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালত। সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় প্রদান করেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন- নওগাঁর পতœীতলা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের শ্রী কাজল মালী এবং পোরশা থানার গোবরাকুড়ি এলাকার ওসমানের ছেলে হ্যাপি। তাদেরকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। একই সাথে প্রত্যেকে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। আসামী হ্যাপি পলাতক রয়েছেন।
আসামী শ্রী কাজল মালীর পক্ষে অ্যাডভোকেট সোমেন্দ্র নাথ কুন্ডু এবং রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত বিশেষ কৌশলী মোঃ মকবুল হোসেন মামলা পরিচালনা করেন। অপরদিকে- আসামী হ্যাপির মামলায় রাষ্টপক্ষের বিশেষ কৌশলী ছিলেন মোঃ মকবুল হোসেন।

আদালতে মামলা সূত্রে জানা যায়- গত ২০২০ সালের ২৭ মার্চ দুপুর আড়াইটার দিকে নওগাঁ জেলার পতœীতলা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী নারী তার বাড়ির পিছনে শুকনো পাতা ঝাড়– দিতে যান। এসময় একই গ্রামের শ্রী কাজল মালী পিছন দিক থেকে জাপটে ধরে মুখে গামছা ঢুকিয়ে দেয়। পরে তার শয়ন ঘরে নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। ঘটনায় প্রতিবন্ধী নারীর স্বামী ১লা এপ্রিল পতœীতলা থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। আদালতে আসামী ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তদন্ত শেষে আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

২০২২ সালে ৮ জুন মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়ে চলতি বছরের ৩ আগস্ট ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন সমাপ্ত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শ্রবন করা হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য ধার্য্য হলে আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার প্রকাশ্যে আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। এছাড়া আসামীর ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ছয়মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। আসামী পূর্ব থেকেই জেল হাজতে থাকায় তাকে সাজা পরোয়ানা পড়ে শুনানো হয়। জরিমানার অর্থ ভুক্তভোগী নারীকে প্রদানের নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক।

অপরদিকে- গত ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি পোরশা থানার এক মাদ্রাসা ছাত্রী তার নানীর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে কাশিতাড়া এলাকার জনৈক হারুন শাহের আমবাগানে নিয়ে অজ্ঞাতনামা একব্যক্তি ওই ছাত্রীকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। রক্তাক্ত ও মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন তার নানাকে খবর দেয়। পরে নানা এসে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়। ছাত্রীর নানা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে পোরশা থানার গোবরাকুড়ি এলাকার ওসমানের ছেলে হ্যাপির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আদালতে চলতি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে যুক্তিতর্ক শ্রবন করা হয়। আসামী পলাতক থাকায় নিয়ম অনুযায়ী তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী এস.এম সারোয়ার হোসেন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে জনাকীর্ণ আদালতে সোমবার সকালে পলাতক আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করার রায় ঘোষণা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মেহেদী হাসান তালুকদার। রায় ঘোষণার সময় আসামী পলাতক থাকার সাজা পরোয়ানাসহ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন আদালতের বিচারক। জরিমানার টাকা ভুক্তভোগীকে দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।#

Leave A Reply

Your email address will not be published.