নাটোরে যুবলীগ নেতার হাতের কব্জি কেটে নিয়েছে প্রতিপক্ষরা

0 ১১৫

নাটোর প্রতিনিধি: এলাকায় আধিপত্ত বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে নাটোরে যুবলীগ নেতা মিঠুন আলীকে কুপিয়ে হাতের কব্জি কেটে নেওয়া সহ মিঠুনের সমর্থকদের কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ এসেছে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। রবিবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে শহরের বলারীপাড়া রাজার পুকুরপাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আহত মিঠুন আলী শহরের ভবানীগঞ্জ মহল্লার মৃত শাহাবুদ্দিন আলীর ছেলে ও পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

বর্তমানে মিঠুন আলীকে ঢাকায় একটি বেসরকারী ক্লিনিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। বাঁকী তিনজন নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতে বিক্ষুব্ধ নেতা কর্মিরা হাসপতাল থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল করে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবী জানান।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় আওয়ামীগ নেতা নান্নু শেখ ও যুবলীগ নেতা মিঠুন আলীর মধ্যে এলাকায় আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল। এনিয়ে গত ১৬ এপ্রিল মিঠুন সহ তার সমর্থকরা নান্নু শেখকে কুপিয়ে জখম করে। এরপর থেকেই এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তজনা বিরাজ করছিল।

রবিবার রাত পৌনে ১০ টার দিকে যুবলীগ নেতা মিঠুন আলী ১০ থেকে ১২ জন সহযোগীকে নিয়ে ভবানীগঞ্জ মোড়ের আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বলারিপাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাস্তায় ওৎ পেতে থাকা ১৫ থেকে ২০ জন দুর্বৃত্ত তাদের দিকে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেয়। চোখে মরিচের গুঁড়া পড়ায় কিছু দেখতে না পেয়ে তারা ছটফট করতে থাকেন। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে তাঁদের এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মিঠুনের ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এছাড়াও তাঁর মিঠুনের মাথা, দুই হাত, দুই পা ও পিঠের নিচে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এ সময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে মিঠুনের সমর্থক আরমান আলী, আব্দুলাহ আল রাব্বি ও বকুল মিয়া ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়। আহত ব্যক্তিরা সড়কে পড়ে চিৎকার করতে থাকলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মিঠুন আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। অন্যদের নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকের জন্য পুলিশী অভিযান শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই পক্ষের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। আহত ব্যক্তিরা নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের সমর্থক। হামলাকারীরা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নান্নু শেখ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের সমর্থক। এলাকার আধিপত্য নিয়ে তাঁদর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর জেরে গত ১৬ এপ্রিল নান্নু শেখকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগে মিঠুনসহ তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এর পর থেকেই এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছিল। এর জের ধরেই প্রতিপক্ষরা মিঠুনের হাতের কব্জি কেটে নিয়েছে।

এ ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততাকেই দায়ী করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর নানু শেখকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। সেই মামলায় মিঠুন অভিযুক্ত আসামি। ওই মামলায় যদি পুলিশ অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতো তাহলে এমন ঘটনা হয়তো ঘটতো না।’ গ্রুপিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের সব লোকই তার। যারা হামলার করেছে এবং যারা হামলার শিকার হয়েছে তারা উভয়েই সন্ত্রাসী। পুলিশ প্রশাসন সঠিক তদন্ত করে এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন এটাই তিনি চান।

এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, তিনি ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর পরই ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় এখনো পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ করেনি কেউ। তবুও যেহেতু ঘটনা ঘটেছে তারা অপরাধীদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.